কলকাতা: শোনা যাচ্ছে, করোনা ভ্যাকসিন আর দু'মাসের মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাবে। আর তাতেই মেতে উঠেছে বাঙালি। বাঙালির প্রাণের পুজো দুর্গোৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। করোনাকে হারাবার হাতিয়ার পাওয়ার কথা প্রকাশ্যে আসতেই জোরকদমে শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। দু’মাস আগে পর্যন্ত অখুশি কুমারটুলি আজ তাই হেসে উঠেছে। প্রতিমা গড়ার বরাত পাচ্ছে কুমারটুলির একাধিক শিল্পী।
ভিড় নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম কানুন, প্রতিমা দর্শনের ভার্চুয়াল ব্যবস্থা, স্যানিটাইজারের ব্যবহার ইত্যাদিকে মাথায় রেখেই পুজো উদ্যোক্তারা লেগে পড়েছেন মা দুর্গাকে স্বাগত জানাতে। হয়ত আগের মতো জাঁকজমক থাকবে না এবছর, কিন্তু বাঙালির দুর্গা পুজো কোনও ভাবেই আটকাতে পারবে না করোনা। কয়েকদিন আগেও মৃৎশিল্পীদের কাছে প্রতিমার বরাত আসছিল না। যেখানে পুজোর পাঁচ ছমাস আগেই তাঁরা প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করে দেন, সেখানে অবসরেই দিন কাটছিল তাঁদের। কিছুদিন আগে পর্যন্তও শুধুমাত্র বাড়ির পুজোর জন্যে একচালার প্রতিমা গড়ার বরাত জুটেছিল তাঁদের। কিন্তু এখন ছবি পাল্টে গিয়েছে। বড় বড় উদ্যোক্তাদের থেকে বড় বড় বরাত পাচ্ছেন কুমারটুলির শিল্পীরা। তাই প্রাণ ফিরেছে পটুয়াপাড়ার। ভ্যাকসিন আসার খবরের জোরেই এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন তাঁরা। বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে তাঁদের তৈরি দুর্গা প্রতিমা।
কুমারটুলির বিখ্যাত শিল্পী রাখালচন্দ্র রুদ্র পালের পুত্র নারায়ণচন্দ্র রুদ্র পালের কথায়, কিছুদিন আগেও তাঁরা ভাবতে পারেননি এবছর শহরে পুজো হতে পারে বলে। একচালার প্রতিমার সামান্য কিছু বরাতই জুটেছিল তাঁদের। তবে তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের ৮ থেকে ১০টি বড় দুর্গা গড়ার বরাত পেয়েছেন। হাতে মাত্র কটা দিন, দম ফেলতে পারছে না কুমারটুলি।
এদিকে গড়িয়া স্টেশন রোড, হাওড়া, ইছাপুর ও কোন্নগরের চার পাঁচটি বড় বরাত পেয়ে খুশি শিল্পী সুজিত পাল। পাশাপাশি বনমালী সরকার স্ট্রিটের শিল্পী গৌরাঙ্গ পাল ৭টি বড় দুর্গা প্রতিমা গড়ার বরাত পেয়েছেন। চারটি বরাত পেয়ে শিল্পী উত্তম পাল জানিয়েছেন, তিনি অল্প সংখ্যক কারিগর নিয়ে কাজ করেন, তাতেও একাধিক একচালার প্রতিমার সঙ্গে চারটি বড় বরাত পাওয়াতে হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। হাওড়া, সল্টলেক, সালকিয়া ও কলকাতার দর্জিপাড়ার প্রতিমার বরাত মিলেছে তাঁর।
আরেক শিল্পী বিশাল পালের কথায়, তিনি কয়েকদিন আগেই চারটি বড় প্রতিমার বরাত পেয়েছেন। এই বাজারে এতেই তিনি খুশি। প্রয়াত মৃৎশিল্পী নীলকান্ত পালের স্ত্রী গৌরী পাল দুটি বড় প্রতিমার বরাত পেয়েছেন। পাশাপাশি কুমারটুলির অন্যান্য শিল্পীরাও ব্যস্ত হয়েছেন ইদানিং। করোনা কবলিত আমেরিকাতেও যাবে কুমারটুলির দুর্গা। ফাইবারের এই প্রতিমা গড়েছেন কৌশিক ঘোষ। অন্যদিকে মিন্টু পালের তৈরি পাঁচটি প্রতিমা ইতিমধ্যেই পাড়ি দিয়েছে বিভিন্ন দেশে। কুমারটুলির ১৭ টি প্রতিমা ইতিমধ্যেই বিদেশে রওনা হয়েছে। যদিও আমেরিকা ও লন্ডনের বেশ কিছু বরাত বাতিলও হয়েছে।