নয়াদিল্লি: উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতার বাবাকে হত্যার দায়ে বহিষ্কৃত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারকে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করল আদালত৷ এই ঘটনার অভিযুক্ত কুলদীপের ভাই অতুল সেঙ্গার ও দুই পুলিশকর্মীকে একই সাজা শোনানো হয়েছে৷ নির্যাতিতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ উভয়কে দশ লক্ষ টাকা জরিমান দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে দিল্লি আদালত৷
উন্নাও ধর্ষণকান্ডে আগেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল বহিষ্কৃত বিজেপি নেতা কুলদীপ সিং সেঙ্গার-সহ ছয় জন। এই ঘটনায় কুলদীপ সেঙ্গারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায় আদালত। শুক্রবার জেলা বিচারক রায় ঘোষণার সময় বলেন, ‘‘নির্যাতিতা কিশোরী তার বাবাকে হারিয়েছে৷ ওই পরিবারের চারজন অপ্রাপ্তবয়স্ক রয়েছে৷ তাদের মধ্যে তিনজনই নাবালিকা৷’’
২০১৭ সালে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর প্রশাসনিক অবহেলা, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার সম্মুখীন হতে হয় ওই নাবালিকা ও তার পরিবারকে। কুলদীপের নির্দেশেই ওই কিশোরীর বাবাকে ভুঁয়ো অস্ত্র আইন মামলায় ফাঁসানো হয়৷ তাঁর কাছে দেশি পিস্তল থাকার অভিযোগে থানায় তুলে এনে বেধরক মারধর করে পুলিশ৷ গত বছর অগাস্ট মাসে কুলদীপের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আদালত৷ পরে কুলদীপ সিং সেঙ্গার গ্রেফতার হলে এক বছর পরে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিজেপি। দু'বছর আগে হওয়া ওই ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ৷ আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের হেডলাইন হয়ে ওঠে উন্নাও-কাণ্ড৷
আদালত জানায়, ওই ঘটনার সময় কুলদীপ দিল্লিতে থাকলেও উন্নাও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর৷ তাঁর কথা মতন কাজ করছিল পুলিশ৷ বিনা অপরাধে ওই নির্যাতিতার বাবাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে থানায় মারধর করা হয়৷ ৫৫ বছরের ওই বৃদ্ধকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেন কুলদীপ৷ পরে মারাত্মক জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। ২০১৮ সালের শেষের দিকে নিগ্রহের বিচার চেয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের লখনউয়ের বাড়ির সামনে উপস্থিত হন ওই নিগৃহীতা। তিনি জানিয়ে দেন, বিচার না পেলে তিনি আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করবেন। ওই নাবালিকাকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নিগৃহীতা তাঁর আইনজীবী ও দুই কাকিমার সঙ্গে আদালতে যাওয়ার সময় একটি ট্রাক তাঁদের গাড়িকে ধাক্কা মারে। সেই গাড়ির নম্বরপ্লেট কালো রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ঘটনায় গুরুতর জখম হন নিগৃহীতা। তাঁকে দিল্লির এইমস হাসপাতলে নিয়ে আসা হয়। সেখানে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা চলার পর সেপ্টেম্বরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার সময় জেলা জজ ধর্মেশ শর্মা জানান, ‘কোনওভাবেই অস্বীকার করা যায় না যে এই ঘটনায় আইনের শাসন ভেঙে পড়েছিল। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মী হওয়ায় সত্ত্বেও সেঙ্গার, অশোক ভাদাউরিয়া ও কেপি সিংয় আইন ভঙ্গ করেন৷ থানায় এনে নির্যাতিতার বাবাকে বেধকরক মারধর করার ফলেই তাঁর মৃত্যু হয় তাঁর। তাই এই মামলায় অভিযুক্তদের কোনও মতেই রেহাই দেওয়া হয়নি।’