দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিকেও সারছে না রোগ! কেন? বাড়ছে উদ্বেগ, জরুরি বৈঠকে রাজ্য

দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিকেও সারছে না রোগ! কেন? বাড়ছে উদ্বেগ, জরুরি বৈঠকে রাজ্য

Kolkata

কলকাতা: সমুখে বিপদ৷ কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক৷ কিন্তু কেন?

জ্বর-সর্দি-কাশি হোক, কিংবা অন্য কোনও রোগবালাই, মুঠোমুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াটা যেন অনেকেরই অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এই দলে কি রয়েছেন আপনিও? দীর্ঘদিন ধরে কি অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছেন? অথচ মিলছে না ফল৷ কাজ করছে না অন্য কোনও ওষুধ৷ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ আপনার শরীরে তৈরি হয়ে যায়নি তো? কেন এমনটা হচ্ছে, উত্তর খুঁজতে বিশেষ বৈঠকে বসতে চলেছে তিনটি দফতর ও কমিটি৷

ইদানিং কালে একটা সমস্যা বেশ গম্ভীর হয়ে উঠেছে৷ দেখা যাচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিকের গোটা কোর্স শেষ করে ফেলার পরেও রোগ নিরাময় হচ্ছে না। এই সমস্যা শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতে নয়, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই লক্ষ্যনীয়৷ কেন এমনটা হচ্ছে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমেই উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধায় ওষুধে আর কাজ হচ্ছে না৷ 

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অনেকই দোকান থেকে কিনে মুড়িমুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক খান৷ কিন্তু লাগাতার ও অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও শুকাচ্ছে না ক্ষতস্থান৷ কিংবা সারছে না ফুসফুসের সংক্রমণ৷ অগত্যা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হচ্ছে৷ কিন্তু চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক বদলে দিলেও কাজ হচ্ছে না৷ কে বলতে পারে আপনার শরীরে হয়তো বাসা বেঁধেছে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়া৷ বর্তমানে এই সমস্যা যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে এমনটাই আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ৷ কিন্তু, এর কারণ কী? 

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় বলছেন, ‘‘যথেচ্ছ ভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়ে চলেছে৷ যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানেই ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আমাদের আশঙ্কা, এক সময় হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও রোগ সারানো যাবে না।” এর ফলে রোগী মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা৷ 

চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার এপ্রসঙ্গে বলেন, “পৃথিবীতে মানুষের পাশাপাশি  পশুরাও রয়েছে। পশুদের সংক্রমণ হয়েছে মনে হলেই তাদের যথেচ্ছ ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। সেই পশুদের শরীরের কোনও অংশ আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে তা ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর৷ কারণ তাদের মধ্যে যে ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া থেকে যায়, তা মাছ-মাংস কিংবা ডিমের মধ্যে দিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে৷ পরবর্তীতে আমাদের থেকে সন্তানের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এমন চলতে থাকলে আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না৷’’ 

সম্প্রতি পেটের সমস্যা এবং টাইফয়েডের উপসর্গ নিয়ে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সুন্দরবনের এক যুবক৷ এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসার পরেও রোগ নিরাময় না হওয়ায়, তাঁর মল পরীক্ষা করা হয়৷ চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, ওই যুবকের শরীরে সালমোনেলা টাইফি (টাইফয়েডের জীবাণু), অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে উঠেছিল। তাই বাধ্য হয়েই অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অনেক উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকরী না হলে, তাঁকে বাচানো যেত না বলেই চিকিৎসকদের দাবি। অ্যান্টি বায়োটিকের এই সমস্যা নিয়ে উদ্বেগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-ও। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও করেছে তারা৷ সবার আগে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷

এদিকে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসস্ট্যান্স (Antimicrobial resistance) বা AMR সতর্কতা দিবস পালন। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত চলা এই কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য দফতর, প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর ও মৎস্য দফতর। আগামী ২৩ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার এই তিন দফতরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ কমিটির সদস্যরা।

চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতর ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক চিহ্নিত করেছে। শীঘ্রই SOP প্রকাশ করে জানানো হবে কোন কোন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে, আর কোনগুলো ব্যবহার করা যাবে না৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + 17 =