কলকাতা: বঙ্গ রাজনীতিতে বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনিবার্যভাবে যে নামটা উঠে আসে তা হল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এর আগে বহু বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। শোভন-বৈশাখী জুটির নাম শুনলেই আলোড়ন ওঠে রসিক মহলে। এহেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কোনোরকম রাজনৈতিক পদের অধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও যিনি বারবার রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন, আজ তাঁর সম্বন্ধে রইল কিছু অজানা তথ্য।
শিক্ষামহলে পরিচিত থাকলেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক মহলের চর্চায় অনুপ্রবেশ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে। তিনি প্রাক্তন তৃণমূল নেতার ‘বিপদের বান্ধবী’। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের আঁচ এসে লাগে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে। এর জেরেই তৃণমূল ত্যাগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদা ঘনিষ্ঠ শোভন বাবু, কানাঘুষো শোনা যায় তেমনটাই। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার বেনিয়াপুকুর অঞ্চলের মিল্লি আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়া ওই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপকও ছিলেন তিনি। ২০১৪-তে তিনি যোগ দেন তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপায়। এছাড়া বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি পরিচয়, তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডলের স্ত্রী।
ওয়েবকুপার সদস্য থাকাকালীন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচিতি গড়ে ওঠে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূলে থাকাকালীন পরিবেশমন্ত্রী পদে যখন ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ সেই সময় পূর্ব কলকাতা জলাভূমি পরিচালন পর্ষদের কমিটিতে রেখেছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও শাসক দল থেকে শোভনবাবুর ইস্তফার পর সমস্ত পদ ছেড়ে দেন তিনিও।
লোকসভা নির্বাচনের পর পরই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি ও তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে বেজায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকেও। যে কোনো অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখীদেবীর নাম না থাকলে ক্ষুব্ধ হতেন বিজেপি নেতা। এমনকি শোভন-বৈশাখীর ‘গোঁসা’ মেটাতে হামেশাই মাঠে নামতে হয়েছে বিজেপির বর্ষীয়ান নেতাদের। পদ্ম শিবিরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পদোন্নতি ঘটলেও তাঁর বান্ধবীকে তেমন দায়িত্বভার দেওয়া হয়নি। কিন্তু শোভনবাবু বরাবরই থাকেন বান্ধবীর পাশে।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে এযাবৎ প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক মিটিং মিছিল কিংবা বৈঠকে হামেশাই গড় হাজির থেকেছেন তিনি। সম্প্রতি শোভন-বৈশাখী পরিচালিত বিজেপির একটি রোড শোয়ের ঘোষণা করা হলেও তাতে শেষ মুহূর্তে যেতে পারেননি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে শোভন চট্টোপাধ্যায়ও থাকেন অনুপস্থিত। তাঁদের এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত বদল নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিল বিজেপি। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, শোভনবাবু যেন চলছেন বান্ধবীর ছায়ায়। তবে, শোনা যাচ্ছে আগামী সোমবার বিজেপির একটি কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অংশ নিতে চলেছেন শোভন-বৈশাখী৷
বাংলার সাম্প্রতিক রাজনীতিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের চেয়ে যেন অধিক সক্রিয় বৈশাখীদেবী। রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন সমালোচনা বিতর্কে একাধিক বার প্রকাশ্যে এসেছেন তিনি। সে তুলনায় শোভন চট্টোপাধ্যায় যেন নেতা হিসেবে অনেক বেশি ম্লান। স্বতন্ত্র প্রসঙ্গে বহুদিন তাঁর নাম চর্চায় আসেনি। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক মহলে শোভনবাবুর স্বতন্ত্র ভূমিকা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন।