কলকাতা: ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ৷ তবে দু’দেশের জীবনশৈলী, খাওয়া-দাওয়া, এমনকী ঘর-বাড়ির মধ্যেও রয়েছে বিস্তর ফারাক৷ এর অন্যতম কারণ হল আমেরিকা একটি উন্নত দেশ আর ভারত উন্নয়নশীল৷ এছাড়াও আমেরিকা আয়তনে ভারতের বহুলাংশে বড় হলেও, জনসংখ্যা ভারতের চেয়ে অনেকটাই কম৷ এছাড়াও আরও নানা কারণ রয়েছে, যার জন্য ভারত ও আমেরিকায় তৈরি বাড়ির মধ্যে পার্থক্য গড়ে উঠেছে৷
আরও পড়ুন- পরিমাণের তালিকায় প্রথম দশে ঢুকল ভারত, খোঁজ পাওয়া লিথিয়ামের মূল্য আকাশছোঁয়া
সবার আগে বলা যাক নির্মাণক্ষেত্রের পার্থক্যের কথা৷ আমেরিকা ও ভারতে বাড়ি নির্মাণ পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ ভারতে ইট, সিমেন্ট, টাইলস বসানো ঘরই সেরা বলে বিবেচিত হয়৷ সেখানে আমেরিকায় অধিকাংশ বাড়ি নির্মিত হয় কাঠ দিয়ে৷ আমেরিকায় ইটের চেয়ে কাঠ অনেক বেশি সহজপ্রাপ্ত৷ পাশাপাশি খুব তাড়াতাড়ি কাঠে বাড়ি তৈরিও করে ফেলা যায়৷ দেওয়াল থেকে মেঝে, সবটাই তৈরি হয় কাঠ দিয়ে৷ সেখানে ইট-সিমেন্টের বাড়ি বানাতে অনেক বেশি সময় লাগে৷
তবে ভারতীয়রা আগামী ৫০-৬০ বছরের কথা ভেবে মজবুত বাড়ি নির্মাণের স্বপ্ন দেখে৷ কখন কখনও সেই বাড়ি ২০০-৩০০ বছর পর্যন্ত মজবুত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে৷ কিন্তু আমেরিকায় প্রতিটি প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বাড়ির পরিবর্তন করতে থাকে৷ সেটাও কাঠ দিয়ে বাড়ি তৈরির অন্যতম কারণ৷
ভারতে কাঠের বাড়ি তৈরি করার কিছু সমস্যাও রয়েছে৷ এখানে আবহাওয়া অনেক বেশি উষ্ণ৷ ফলে কাঠ খারাপ হতে পারে৷ তাতে ফাটল ধরতে পারে৷ সেখানে আমেরিকার শীতল আবহাওয়ায় এই সমস্যা থাকে না৷
ভারতীয়দের ঘরের মেঝে মূলত টাইলস কিংবা মার্বেল দিয়ে তৈরি করা হয়৷ গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে সিমেন্ট চকচকে করে তৈরি হয় মেঝে৷ আমেরিকায় কিন্তু তেমনটা একেবারই করা হয় না৷ সেখানে কাঠের উপর সিমেন্ট দেওয়ার পর তা মসৃণ করে দেওয়া হয়৷ তার উপর কোনও মার্বেল বা টাইলস বসানো হয় না৷ বরং মেঝেতে শোভা পায় বিভিন্ন ধরনের কার্পেট৷ আমেরিকায় বাড়িগুলিতে ঢুঁ দিলে সর্বত্রই কার্পেট নজরে আসবে৷ এর পিছনে একটি কারণও রয়েছে৷ ভারতের চেয়ে আমেরিকায় অনেক বেশ ঠান্ডা পড়ে৷ কার্পেটের চেয়ে মার্বেল বা টাইলসের মেঝেতে ঠান্ডাও বেশি লাগে৷
পার্থক্য রয়েছে দুই দেশের হেঁশেলেও৷ আমেরিকার রান্নাঘরে কার্পেট নয়, দেখা যাবে কাঠের মেঝে৷ টাইলস বা মার্বেলের দেখা মিলবে কেবলমাত্র শৌচালয়েই৷ কারণ সেখানে কাঠের মেঝে বা কার্পেট বিছানো সম্ভব নয়৷
ভারত এবং আমেরিকা দুই দেশেই বাড়ি কিনতে হলে কিংবা ভাড়া নিতে চাইলে, দুটি বিকল্প পেয়ে যাবেন৷ একটি হল আসবাব সহ, আরেকটা হল খালি বাড়ি৷ আমেরিকায় ফার্নিসড ঘরে আপনি খাট, আলমারি, সোফা, পাখা, টেবিলের মতো সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনস পেয়ে যাবেন৷ যা দুই দেশের ক্ষেত্রেই সমান৷ তবে ভারতে নন ফার্নিসড ঘর মানে সম্পূর্ণ খালি বাড়ি৷ কিন্তু আমেরিকায় নন-ফার্নিসড ঘরেও আপনি ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, চিমনি আর ওয়াটার নবের মতে বেসিক জিনিসগুলি পেয়ে যাবেন৷
ভারতে প্রতিটি ঘরে আপনি সুইচ বোর্ড পেয়ে যাবেন৷ একটি ঘরে একটি বা খুব বেশি হলে দুটি সুইচ বোর্ড থাকে৷ এবং এগুলি দেওয়ালে কিছুটা উপর দিকে থাকে৷ যাতে বাচ্চারা নাগাল না পায়৷ আমাদের দেশে প্রতিটি ঘরে একটা কিংবা দুটো সকেট থাকে৷ কিন্তু আমেরিকায় প্রতিটি ঘরে পাঁচ থেকে ছ’টি সকেট থাকে৷ তবে তাতে অন অফের সুইট থাকে না৷ এর ভিতরে ২৪ ঘণ্টা পাওয়ার সাপ্লাই থাকে৷ আমেরিকার মানুষরা মনে করেন, প্রতিটি জিনিসেই অন অফের বোতাম থাকে৷ ফলে সুইচবের্ডে বাড়তি সুইচের প্রয়োজনীয়তা নেই৷ আমেরিকায় শুধুমাত্র লাইট অন-অফের সুইচ মিলবে৷
ভারতে একটি বাড়িতে একটি কিংবা দুটি এসি থাকে৷ গরমের দিনে গোটা পরিবার অনেক সময় এক ঘরেই ঘুমিয়ে পড়ে৷ কখনও ফোল্ডিং বিছানা পেতে, কখনও বা মাটিতে গদি বিছিয়ে নেওয়া হয়৷ কিন্তু, আমেরিকায় সেন্ট্রালাইড এসি-র বন্দোবস্ত রয়েছে৷ অর্থাৎ পুরো ঘরের তাপমাত্রা একটি সুইচ দিয়েই অ্যাডজাস্ট করা হয়৷
ভারতের বাড়িগুলি ছাদ ছাড়া যেন অপূর্ণ৷ বাড়ি ছোট হোক বা বড়, প্রতিটি ঘরে ছাদের দেখা মিলবেই৷ আমেরিকায় কিন্তু ছাদের ব্যবহারই নেই৷ মার্কিন মুলুকে কোনও দেশে আপনি ছাদের দেখা পাবেন না৷ সেখানে বাড়ির ছাদগুলি তৈরি হয় ত্রিভুজের মতো৷ এতে বাড়ির শোভা যেমন বাড়ে, তেমনই বৃষ্টির দিনে জলও জমে না৷ না হলে কাঠের বাড়ি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল তুষারপাত৷ ত্রিকোণাকার ছাদে বরফ জমা হতে পারে না৷
ভারতীয় কলে জল আসার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে৷ সেই সময়ের মধ্যে ট্যাঙ্ক এবং ছোট বড় বালতি এবং পাত্র ভরে রাখা হয়৷ আমেরিকায় প্রতিটি ঘরে ২৪ ঘণ্টা জল আসে৷ তাই জল সঞ্চয়ের প্রয়োজনই হয় না৷ প্রতিটি ঘরে দুটো নল থাকে৷ একটা গরম জলের আর একটি ঠাণ্ডা জলের৷ সেখানে প্রতিটি বাড়িতে সেন্ট্রালাইড গিজার লাগানো থাকে৷
ভারতীয় ঘর পর্দা ছাড়া বেমানান৷ সেখানে আমেরিকায় পর্দার চল নেই বললেই চলে৷ আমেরিকায় পর্দার বদলে প্লাস্টিক শিট ব্যবহার করা হয়৷ ভারতে এমনটা বিভিন্ন অফিসে দেখতে পাওয়া যায়৷ আমেরিকায় কেবল ধনী ব্যক্তিদের বাড়িতেই পর্দা শোভা পায়৷
ভারতীয় রান্না ঘরে সাধারণ একটি সিঙ্ক দেখা যায়৷ কিন্তু, আমেরিকায় দুটো সিঙ্ক থাকে৷ ভাবছেন হয়তো বেশি বাসনের জন্য দুটি সিঙ্ক বসানো থাকে৷ তেমনটা একেবারেই নয়৷ এখানে একটি সিঙ্কে বাসন মাজা হয়, অপরটি খাবার ফেরার জন্য ব্যবহার করা হয়৷ সেই সিঙ্কের মাঝে গর্ত করা থাকে৷ নিকাশি ব্যবস্থার মাধ্যমে তা বাইরে চলে যায়৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>