india
নয়াদিল্লি: পুরনো সংসদ ভবনকে বিদায় জানিয়ে গণেশ চতুর্থীতে শুরু হল ‘পার্লামেন্ট হাউস অফ ইন্ডিয়া’র যাত্রা৷ মঙ্গলবার নতুন সংসদ ভবনে অধিবেশন শুরুর আগে পুরনো সংসদের সেন্ট্রাল হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘‘নতুন সংসদ ভবনের হাত ধরে নতুন ভবিষ্যতের সূচনা হল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আজকের দিনটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। আজ আমাদের সকলের গর্বের দিন৷’’
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর নয়া সংসদ ভবনের ভূমিপূজা এবং শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় আড়াই বছর নির্মাণ কাজ চলার পর ২০২৩ সালের ২৮ মে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেন তিনি। ওই দিন ভবনের মাটি ছুঁয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেছিলেন মোদী। সাক্ষী থেকেছিল গোটা দেশ৷
মঙ্গলবার সেই সংসদ ভবনে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রবেশ করলেন দেশের সাংসদেরা। বেলা দেড়টা থেকে নতুন ভবনে শুরু হল সংসদের বিশেষ অধিবেশন। যা নিয়ে সকাল থেকেই ছিল সাজো সাজো রব৷ নতুন সংসদ ভবনে প্রবেশের আগে পুরনো সংসদ ভবনের সামনে চলল ‘ফটোসেশন’৷ যার মধ্যমণি ছিলেন স্বয়ং নমো৷ নতুন সংসদ ভবনের নাম রাখা হয়েছে ‘পার্লামেন্ট হাউস অফ ইন্ডিয়া’৷ এই ভবনে রয়েছে মোট ছ’টি প্রবেশদ্বার৷ এই ছয় দরজার প্রহরায় রয়েছে ছয় ‘বিশেষ’ রক্ষী।
এই ছয়টি দ্বার পাহারা দেবে কয়েকটি বাস্তবের এবং কয়েকটি পৌরাণিক কাহিনির প্রাণীর মূর্তি৷ তাদের সকলেরই নিজস্ব মাহাত্ম্য রয়েছে৷ প্রতিটি দ্বারের পৃথক পৃথক নামকরণও করা হয়েছে৷ এই ছয়টি দ্বার হল- গজ দ্বার, অশ্ব দ্বার, গরুড় দ্বার, মকর দ্বার, শার্দুল দ্বার এবং হংস দ্বার। প্রতিটি দরজায় অঙ্কিত প্রাণীর ভাস্কর্য অনুযায়ী দরজাগুলির নামকরণ করা হয়েছে।
সংসদ ভবনের উত্তর দিকে রয়েছে গজ দ্বার৷ হাতির নামানুসারে এই দ্বারের নামকরণ করা হয়েছে৷ হাতি হল বুদ্ধি, স্মৃতি, সম্পদ এবং প্রজ্ঞার প্রতিনিধি৷ বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, উত্তর দিক বুধের সঙ্গে যুক্ত৷ এটি বুদ্ধির উৎস বলে বিবেচিত হয়। সেই কারণেই উত্তরে রাখা হয়েছে গজ দ্বার৷
এর পর রয়েছে অশ্ব দ্বার৷ ঘোড়া থেকে এই দরজায় নামকরণ করা হয়েছে। যা শক্তি এবং সাহসের প্রতীক৷
পার্লামেন্ট হাউস অফ ইন্ডিয়ার তৃতীয় প্রবেশদ্বারের নাম রাখা হয়েছে গরুড় দ্বার। এই দ্বার রয়েছে ভবনের পূর্ব দিকে৷ পৌরানিক মতে গরুড় হল পক্ষীরাজ। তাকে বিষ্ণুর বাহন বলে মনে করা হয়। গরুড় ধর্ম এবং কর্তব্যের প্রতীক৷
সংসদ ভবনের চতুর্থ দরজা হল মকর দ্বার। সামুদ্রিক প্রাণীর নামে এই দ্বারের নামকরণ করা হয়েছে৷ মকর হল বিভিন্ন প্রাণীর সংমিশ্রণ। সংসদ ভবনের পঞ্চম দরজার নাম রাখা হয়েছে শার্দুল দ্বার। এটিও একটি পৌরাণিক প্রাণীর নামানুসারে তৈরি৷ শার্দুলের শরীর ছিল সিংহের, কিন্তু তার মাথা ঘোড়া, হাতি বা তোতাপাখির।
নতুন সংসদ ভবনের ষষ্ঠ এবং অন্তিম দ্বার হল হংস দ্বার। রাজহাঁসের নামে এই দ্বারের নামকরণ হয়েছে। পুরাণ মনে, হংস দেবী সরস্বতীর বাহন। মনে করা হয় হংস মোক্ষ, আত্ম-উপলব্ধি এবং প্রজ্ঞার প্রতীক।
নয়া সংসদ ভবনের এই ছ’টি দ্বারই শুধু নজর কাড়বে না, এর অন্দরসজ্জাও চোখ ধাঁধানো। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে থেকে বিখ্যাত উপকরণ নিয়ে তৈরি হয়েছে পার্লামেন্ট হাউস অফ ইন্ডিয়া। নতুন লোকসভা কক্ষটিতে রয়েছে ৮৮৮টি আসন। নিম্নকক্ষের নকশা করা হয়েছে ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূরের থিমের উপর ভিত্তি করে। সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অন্দরের সজ্জায় রয়েছে জাতীয় ফুল পদ্মের থিম। রাজ্যসভা হলে রয়েছে মোট ৩০০টি আসন।
এর পাশাপাশি নয়া সংসদ ভবনে এবার থেকে পাকাপাকি ভাবে থাকবে স্বর্ণদণ্ড ‘সেঙ্গল’। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে সেটি থাকবে স্পিকারের চেয়ারের সামনে৷ যদিও এই সেঙ্গল নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক বিস্তর। বিজেপি’র দাবি, ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসাবে ব্রিটশ শাসক এই সেঙ্গল জওহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিল। প্রাচীন চোল সাম্রাজ্যের রীতি নেমে গোপালাচারীর অনুপস্থিতিতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট এই স্মারক দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন৷ যদিও কংগ্রেসের দাবি, এটা সর্বৈব ‘মিথ্যা এবং আজগুবি’৷ কংগ্রেসের বক্তব্য, সেঙ্গল সম্পর্কে প্রামাণ্য কোনও নথি নেই।