aditi munshi
কলকাতা: বাংলা টেলিভিশনে একটি গানের রিয়ালিটি শো থেকে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। তার পর ধীরে ধীরে গানের দুনিয়ায় উত্থান৷ ছোটখাটো চেহারা, মিষ্টি হাসির সেই মেয়াটা গোটা বাংলায় মঞ্চ মাতান হরিনামে৷ হ্যাঁ, তিনি কীর্তিন শিল্পী অদিতি মুন্সী৷ তাঁর হাত ধরেই অধুনা বাংলায় নতুন মাত্রা পেয়েছে কীর্তন৷ বাঙালি শ্রোতার কাছে নতুন ভাবে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন হরিনাম। সেই অদিতি মুন্সীর স্বামী দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতেই বৃহস্পতিবার হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তেই এই অভিযান বলে জানিয়েছেন দেবরাজ। শুধু দেবরাজের বাড়িই নয়, সিবিআই পৌঁছে গিয়েছিল অদিতির স্টুডিয়োর ঠিকানাতেও। নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠেছে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ৷ সেই মামলার তদন্তে অদিতির স্বামীর বাড়িতে সিবিআই তল্লাশিতে চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
বিধাননগর পুরসভার দীর্ঘ দিনের কাউন্সিলর দেবরাজ। অধুনা মেয়র পারিষদও বটে। ঘাম-রক্ত ঝরিয়েই দলে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন বলে মনে করেন তৃণমূলের একাংশ। তবে অনেকেরই ধারণা তৃণমূল কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর মাথায় হাত রয়েছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ, তাঁর হাত ধরেই তৃণমূলে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিলেন দেবরাজ৷ ২০১৮ সালে কীর্তন শিল্পী অদিতি মুন্সির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তৃণমূল নেতা৷ তবে দেবরাজের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, তিনি গোটা বাংলায় অদিতির স্বামী বলেই অধিক পরিচিত৷ অদিতি যখন দেবরাজের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন, তখন বাংলার মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন ছিল, কে এই দেবরাজ? পরে জানা যায়, আড়ালে থাকালেও তিনি আসলে রাজ্যের শাসক দলের একজন ‘দাপুটে’ নেতা৷
এর পর ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে যখন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে তৃণমূল কংগ্রেস, তখন তাতে ছিল চমক৷ রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের দীর্ঘদিনের নেতা পূর্ণেন্দু বসুর বদলে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় কীর্তন শিল্পী অদিতি মুন্সীকে৷ যিনি কিনা রাজনীতির আঙিনায় একেবারেই আনকোরা৷ ততদিনে দেবরাজ কিন্তু বিধাননগরের কাউন্সলর পদে বসে গিয়েছেন৷
বাগুইআটি দক্ষিণপাড়ার মেয়ে অদিতি মুন্সী রবীন্দ্রভারতী থেকে কীর্তন নিয়ে এমএ করেছেন। রয়েছে নিজের গানের স্কুল৷ পাশাপাশি তিনি ব্যস্ত থাকেন স্টেজ শো-তে৷ ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনে অদিতি যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে দেখা যায় সেই সময় তাঁর হাতে ছিল নগদ দেড় লক্ষ টাকা। স্বামী দেবরাজের হাতে ছিল নগদ ৪৫ হাজার টাকা। ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টও দিয়েছিলেন অদিতি৷ সেই তথ্য মোতাবেক, সেই সময় অদিতির একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ছিল ২ লক্ষ ২ হাজার ২৭২.৪১ টাকা। অপরটিতে সঞ্চয় ২০ হাজার ৭৭৩.৬৭ টাকা। সঙ্গে ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫৪০ টাকার এফডি। স্বামী দেবরাজের একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টে সেই সময় ছিল ৪৯,৭৬৭.৫২ টাকা। আরেকটি অ্যাকাউন্টে ছিল ৬২,০৭৬.২২ টাকা।
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া অদিতির হলফনামায়, মিউচুয়াল ফান্ড, জীবনবিমা, পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে ‘স্পাউস’ (স্বামী/স্ত্রী) কলামে লেখা ছিল ‘নট অ্যাপ্লিকেবল’৷ অর্থাৎ প্রযোজ্য নয়। যার অর্থ দেবরাজের নামে সেই সময় এগুলির কোনওটাই ছিল না। অদিতির একটি জীবনবিমার ম্যাচিউরিটি অ্যামাউন্ট ছিল ১,০০,০০০ টাকা। আরেকটির ২,৫০,০০০ টাকা। পাশাপাশি দু’টি গাড়িও কিনেছিলেন তিনি। একটির দাম ১৮ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা৷ অন্যটির মূল্য প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা। তবে দেবরাজের নামে কোনও গাড়ির উল্লেখ ওই হলফনামায় ছিল না। অদিতি জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে ১৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার সোনার অলঙ্কার। সেখানে দেবরাজের ছিল ৬,৭৫,০০০ টাকার গয়না।
নির্বাচনী হলফনামায় অদিতির পেশা হিসাবে উল্লেখ ছিল সঙ্গীতশিল্পী। স্বামীর দেবরাজের পেশা হিসাবে সিভিল কনস্ট্রাকশন ফার্মের কথা উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি তিনি যে বিধাননগর মিউনিসিপল কর্পোরেশন থেকেও বেতন পেতেন, সে কথাও উল্লেখ ছিল৷ হলফনামা অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে দেবরাজের উপার্জন ছিল ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৭৭৭ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লক্ষ ১০ হাজার ০৯৭ টাকা। এক লাফে এক বছরে আয় বেড়েছিল ৩ গুণ৷