খুন করে সেপটিক ট্যাঙ্কে স্ত্রীর দেহ লোপাট! ৩ বছর পর উদ্ধার শাঁখা পরা কঙ্কাল

খুন করে সেপটিক ট্যাঙ্কে স্ত্রীর দেহ লোপাট! ৩ বছর পর উদ্ধার শাঁখা পরা কঙ্কাল

৩ বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন। দায়ের হয়েছিল খুনের অভিযোগ। সিআইডির হাতে তদন্তভার যেতেই বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। পারিবারিক অশান্তির কারণে স্ত্রীকে খুন করে সেপটিক ট্যাঙ্কে দেহ লুকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে। খুনের তিন বছর পর ভাড়া বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হল মহিলার কঙ্কাল। কঙ্কালের সঙ্গে মিলেছে তাঁর শাঁখা, পলা, নোয়া। শুক্রবার গোয়েন্দাদের জেরার মুখে খুনের কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত।

পরিবার ও পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে হঠাৎ করেই  নিঁখোজ হয়ে যান টুম্পা মন্ডল। মেয়ের খোঁজে ৯ এপ্রিল, অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন বাবা লক্ষ্মণ হালদার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী ভোম্বল মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে সোনারপুর থানার পুলিশ। কিন্তু, টুম্পার খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে আদালতে জামিন পেয়ে যায় অভিযুক্ত।

গত ১৩ জুন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি। গোয়েন্দাদের দীর্ঘ জেরার মুখে টুম্পাকে খুনের কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত স্বামী। অভিযুক্তের বয়ান অনুযায়ী তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, টুম্পাকে গলা টিপে, বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন ভোম্বল। খুনের পর দেহটিকে বাড়ির পিছনের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেন। টুম্পার বাড়িতে জানান, ঝগড়া করে ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছে টুম্পা। এরপরই মেয়ের খোঁজে পুলিশের দ্বারস্থ হয় টুম্পার পরিবার।      

পুলিশ সূত্রে খবর, সোনারপুরের মিলনপল্লী এলাকার একটি বাড়িতে কয়েক বছর আগে ভাড়া থাকতেন ভোম্বল মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রী টুম্পা মণ্ডল। ৩ বছর পর সেই বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকেই উদ্ধার হয় টুম্পার কঙ্কাল। উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি টুম্পার কিনা জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। বাড়ি মালিক রূপালি মল্লিক জানান, ২০২০ সালে তাঁদের বাড়িতে ভাড়া  এসেছিলেন দম্পতি। দু’মাসের জন্য সেখানে ছিলেন। কিছুদিন থাকার পর চলে যায়।

বাড়িওয়ালা আরও জানান, কয়েক বছর আগে তাঁদের বাড়িতে ভোম্বলের দিদি এবং জামাইবাবু ভাড়া থাকতেন। তাঁরাই ভোম্বলদের ভাড়াবাড়িটির সন্ধান দিয়েছিলেন। কিন্তু, টুম্পার দেহ যে তাঁদেরই বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কে ৩ বছর ধরে পচছে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বাড়ির কেউ। শনিবার ভোর ৬টা নাগাদ তাঁদের কাছে সিআইডি মারফত এই খুনের খবর পৌঁছয়। তারপর সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হয় কঙ্কাল। কিন্তু, খুনের মোটিভ নিয়ে এখনও ধন্দে রয়েছেন তদন্তকারীরা। একটি সূত্রের দাবি, পেশায় রাজমিস্ত্রি ভোম্বল কাজে বেরিয়ে গেলে টুম্পা বাড়িতে সারা দিন ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। সেই ফোনের কারণে দম্পতির মধ্যে প্রায়শই অশান্তি চলত। সেক্ষেত্রে পরকীয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। আবার অপর একটি সূত্রের দাবি, লকডাউনের সময় ভোম্বলের কোনও উপার্জন ছিল না। তাই তিনি স্ত্রীকে দেহব্যবসায় নামাতে চেয়েছিলেন। টুম্পা তাতে রাজি না হওয়ায় খুনের ঘটনা।

রবিবার অভিযুক্ত ভোম্বল মণ্ডলকে আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ভোম্বল খুনের কথা স্বীকার করলেও ঠিক কী কারণে খুন? নিশ্চিত হতে  আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *