গাছতলার স্কুলে মেলে মাস্ক-লজেন্স, স্বাগতা ‘দিদি’র পাঠশালায় ভবিষ্যৎ গড়ছে পড়ুয়ারা

শান্তিনিকেতনে গাছের ছায়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঠ দিতেন পড়ুয়াদের, একথা আমরা জানি। ঠিক একইভাবে পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরে বাঘনাপাড়ার মুক্তারপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা স্বাগতা কর্মকার গাছতলায় পাঠশালা খুলেছেন। পাশাপাশি কচিকাঁচা সহ এলাকার কিছু স্কুলছুট থেকে শুরু করে পড়াশোনা না জানা মহিলাদের বিস্কুট, লজেন্স, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, পেন্সিল এসবকিছুই বিলি করছেন।

 

কালনা: শান্তিনিকেতনে গাছের ছায়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঠ দিতেন পড়ুয়াদের৷ ঠিক একইভাবে পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরে বাঘনাপাড়ার মুক্তারপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা স্বাগতা কর্মকার গাছতলায় পাঠশালা খুলেছেন৷ পাশাপাশি কচিকাঁচা সহ এলাকার কিছু স্কুলছুট থেকে শুরু করে পড়াশোনা না জানা মহিলাদের বিস্কুট, লজেন্স, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, পেন্সিল এসবকিছুই বিলি করছেন৷

দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনের জেরে বন্ধ স্কুল কলেজ। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে, একাই থাকেন স্বাগতা। স্কুলে গেলে কচিকাঁচাদের সঙ্গে খানিক দেখা হত, কথা হত, ওদের হাসি-খেলা ধূলোয় মন ভরে থাকত স্বাগতার৷ কিন্তু করোনা সেসব কিছুকে বর্তমানে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ক্রমশ হাঁফিয়ে উঠছিলেন শিক্ষিকা৷ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে জিউধারা তালতলা এলাকায় অনেক দরিদ্র পরিবার বসবাস করে। অনেক ভাবনা চিন্তা করে স্বাগতাদেবী দু’সপ্তাহ আগে সেখানে গিয়ে কচিকাঁচাদের পড়ানোর প্রস্তাব দেন৷ ক্লাস নেওয়ার জন্য তিনি বলেন, ক্লাস করলে মিলবে বিস্কুট-লজেন্স। এরপর এক বটতলায় বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই সপ্তাহে ৪ দিন ধরে পড়াচ্ছেন স্বাগতা৷

স্বাগতা জানিয়েছেন, ক্লাস করতে যাওয়া আগে প্রতিদিন নিজের থেকে পাঁচশো টাকা করে খরচা করে বিস্কুট, লজেন্স, পেন্সিল, মাস্ক ইত্যাদি কেনেন। উপহার পেয়ে পড়ুয়ারাও উৎসাহিত হচ্ছে। ক্লাসে প্রতিদিনই তারা উপস্থিত হয়। দিন দিন পড়ুয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে স্বাগতার এই প্রকৃতি বিদ্যালয়ে ৫০জনের কাছাকাছি পড়ুয়ারা পড়তে আসে। স্থানীয় বাসিন্দারাও স্বাগতা দিদিকে পেয়ে খুব খুশি। তাঁরা বলছেন, প্রাথমিকের একাধিক বিষয় তিনি পড়ান। পাশাপাশি করোনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে। অন্যদিকে নানা মনীষীদের বাণী তুলে ধরে জীবনে এগিয়ে চলার পথে অনুপ্রাণিত করেন।

স্বাগতা দেবী’র এক ছাত্র কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সুমন্ত রায়ে’র কথায়, ‘‘অনেক দিন স্কুলে যাইনি। গ্রামের গাছতলায় স্বাগতা দিদিমণি যখন পড়ান, মনে হয় স্কুলেই রয়েছি।’’ পাশাপাশি বছর তেরোর সুমি দাস প্রাথমিক স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর পড়া ছেড়ে দিয়েছিল, সে বলছে, ‘‘দিদিমণির ক্লাসে এলে লজেন্স, বিস্কুট পাই। এখন পড়তেও পারছি। ভাল লাগছে।’’ স্থানীয়দের মধ্যে বৈশাখি বৈরাগ্য নামের এক বাসিন্দা জানান, স্বাগতা দেবী তাঁর পাঠশালায় তাঁকে নাম সই করা শিখিয়েছেন।

ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রিধারী স্বাগতা দেবী বলেছেন, নিজের ছাত্রছাত্রদের ছেড়ে এত থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই এই নয়া পন্থা শুরু করেছেন। বিধি নিয়ম মেনে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং বজায় রেখেই পড়ুয়াদের বসতে দেন তিনি। তাঁর এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন খোদ কালনা পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগ। তিনি বলেছেন, স্বাগতা দেবীর এই উদ্যোগের জন্য কোনও প্রচেষ্টাই যথার্থ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × two =