কলকাতা: রায় ঘোষণার আগে বিচারপতিরা অনেক সময়ই তাঁদের পর্যবেক্ষণ জানিয়ে থাকেন৷ অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, সেই সব পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন মামলার রায়ের উপর পড়ে না৷ সাম্প্রতিক কালে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ নতুন করে সাড়া ফেলেছে৷ সম্প্রতি তাঁর তিনটি মন্তব্য বিভিন্ন স্তরের মানুষের নজর কেড়েছে৷
মন্তব্য ১- নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের গতি নিয়ে এর আগেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ দিন সাতেক আগে ঠিক একই কারণে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে এক প্রকার হুঁশিয়ারি দেন তিনি৷ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনারা যদি ঠিক করে তদন্ত করতে পারেন তাহলে ভাল, গা ছাড়া মনোভাব দেখালে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে জানাব।’
উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ এই প্রথম নয়৷ ২০১৪ সালে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় ৯ বছরেও সেই তদন্ত শেষ হয়নি।
মন্তব্য ২ – দিন চারেক আগের কথা৷ বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা পুরসভার আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেনছিলেন ‘প্রয়োজন পড়লে যোগী আদিত্যনাথের থেকে কিছু বুলডোজার ভাড়া করুন।’
প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকার বুলডোজারের কাহিনী কারও অজানা নয়৷ সে রাজ্যে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার অস্ত্রই হল বুলডোজার। যদিও যোগী রাজ্যের বুলডোজার সংস্কৃতি নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে৷ গণতন্ত্রে এটা প্রযোজ্য কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে৷ তবে বিচারপতির মুখে ‘যোগীর বুলডোজারের’ কথা উঠতেই তা নজর কেড়েছে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের৷ আলোড়ন পড়েছে বাংলায়৷
মন্তব্য ৩ – এই তালিকায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় শেষ সংযোজন ইস্টার্ন কোলফিল্ডের অধীনস্থ স্কুলগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের বেতন বন্ধের মামলায়৷ সোমবার এই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘স্কুল চালাতে না পারলে আদানিদের বেচে দিন!’
ইস্টার্ন কোলফিল্ডের অধীন স্কুলগুলিতে অনেক পড়ুয়া রয়েছে। তাদের পড়ানোর দায়িত্বে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা নিযুক্ত রয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে কেউ সাত বছর, কেউ আবার দশ বছর বেতন পাননি। এই অভিযোগ শোনার পরেই কোল্ডফিল্ড কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করে বিচারপতি বলেন, ‘মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন, সেটাও দিচ্ছেন না নিজেদের স্কুলের শিক্ষকদের। এটা কি কোনও সভ্য নাগরিক সহ্য করবে? বিচারালয় কি সহ্য করবে? আপনারা খুব কেয়ারলেস। শুধু শিক্ষকদের বেতন না দিতে আপনারা খুব সিরিয়াস। ওরা ভিখারি নাকি? শিক্ষকদের চোখের জল ফেলাবেন না। দেশে স্বাধীনতার অমৃত মহোত্সলব পালিত হচ্ছে আর শিক্ষকদের এই অবস্থা? স্কুল চালাতে না পারলে আদানিকে বেচে দিন।’
এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চোখা শব্দবাণ নিক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের৷ তিনি হয়ে উঠেছেন অসহায়ের ভগবান৷ তাঁর রায় ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছে৷ ঢাকি সমেত