হকের চাকরির জন্য পাঁচ পাঁচটা বছর ধরে লড়াই করেছেন। হাই কোর্টের বিভিন্ন এজলাস ঘুরে অবশেষে চাকরি পেলেন ১৫জন শিক্ষক। রেখা রায়,শবনম আরা, রূপালী বেজ সহ ১৫ জনের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। ২০১৬ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও স্কুল সার্ভিস কমিশনের ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য চাকরি পান নি এই ১৫ জন চাকরিপ্রার্থী। কমিশনে বার বার আবেদন করেও লাভ না হওয়ায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা…এরপর শুরু হয় দীর্ঘ লড়াই। গত ৫ বছর ধরে সেই লড়াই চলেছে। শেষমেশ বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের নির্দেশে স্কুল সার্ভিস কমিশন তাদেরকে যোগ্য বলে বিবেচিত করে দেওয়া হয় সুপারিশপত্র। ১৫ দিনের মধ্যে এই ১৫ জন শিক্ষককে স্কুলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
২০১৬ সালের নবম-দশম শ্রেণীর এসএলএসটি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেই মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। সামনে আসে, ওএমআর শিটে কারচুপির ঘটনা। ২০২২ সালের ২২শে ডিসেম্বর, হাইকোর্টের নির্দেশে স্কুল সার্ভিস কমিশন ওএমআর সিট প্রকাশ করে। সেখানে আবেদনকারীরা দেখতে পান, ২০১৬ সালের নবম দশম শ্রেণীর এসএলএসটির ইতিহাস বিষয়ে একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার পরেও স্কুল সার্ভিস কমিশন তাদের অতিরিক্ত এক নম্বর দেয়নি।
মামলার শুনানি চলাকালীন আবেদনকারী রেখা রায় ,শবনম আরা, রূপালী বেজদের পক্ষের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী আদালতে জানিয়েছিলেন, যে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এই ভ্রান্তি আবেদনকারীরা তার সঠিক উত্তর দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও এক নম্বর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা। আইনজীবী আদালতে জানান, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রশ্ন ছিল, ‘গান্ধী আরউইন চুক্তি কখন স্বাক্ষরিত হয়?’ উত্তরের জন্য এ,বি,সি,ডি চারটি অপশন দেওয়া হয়েছিল। মামলাকারীরা উত্তর দিয়েছিলেন ‘গান্ধী আরউইন চুক্তি সম্পাদিত হয়- ১৯৩১ সালের মার্চে’। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন জানায়, মামলাকারীরা ভুল উত্তর দিয়েছেন। এসএসসি-র দাবি সঠিক উত্তর হল, ‘১৯৩১ সালের মে মাস’।
স্কুল সার্ভিস কমিশন কখনই মানতে চাননি যে মামলাকারীরা সঠিক উত্তর দিয়েছেন। আর সেই ভুলের কারণেই এক নম্বর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন মামলাকারীরা। যার ফলে চাকরি জীবনের ৫ টা বছর নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাদের। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আদালতে নিজেদের ভুল স্বীকার করে কমিশন। এরপরই মামলাকারীদের নিয়োগের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এই মামলায় বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন , মামলাকারীরা অতিরিক্ত এক নম্বর পাওয়ার যোগ্য। সেই এক নম্বর বাড়িয়ে দ্রুত তাদের হাতে নিয়োগ পত্র তুলে দিতে হবে। সেই নির্দেশ মতো শুক্রবার ১৫ জনের হাতে সুপারিশপত্র তুলে দিল স্কুল সারভিস কমিশন।