বছরের শুরুতেই সাফল্য, কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজে মহাকাশে পাড়ি দিল ইসরোর রকেট

বছরের শুরুতেই সাফল্য, কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজে মহাকাশে পাড়ি দিল ইসরোর রকেট

কলকাতা: ২০২৩ সালে চন্দ্রযান-৩ এর বিশাল সাফল্য সাড়া ফেলেছিল গোটা বিশ্বে৷ ২০২৪ সালও সফল্য দিয়ে শুরু করল ইসরো৷ ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর খুঁজতে মহাকাশে পাড়ি দিল ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার স্যাটেলাইট এক্সপোস্যাট৷ যা ভারতের জন্য নিশ্চিত ভাবেই ঐতিহাসিক৷ এর আগে একমাত্র নাসা এক্স-রে পোলারিমিটার স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল মহাকাশে৷ এখনও পর্যন্ত আর কোনও দেশে এ পথে পা বাড়ায়নি৷ আজ, ১ জানুয়ারি সকাল ৯টা বেজে ১০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টার থেকে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেয় ইসরোর এক্সপোস্যাট স্যাটেলাইট।

বছরের শুরুতেই দেশের প্রথম এক্সরে পোলারিমিটার স্যাটেলাইট বা এক্সপোস্যাট (XPoSat)  উৎক্ষেপণ করে নাসার পরেই নিজেদের জায়গা পাকা করে নিল ইসরো। পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল বা পিএসএলভি রকেটে চাপিয়ে এক্সপোস্যাটকে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পৌঁছে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই নিউট্রন তারার জন্ম-মৃত্যু থেকে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের উপর নজরদারি চালাবে এই উপগ্রহ৷ পাশাপাশি মহাকর্ষীয় তরঙ্গের বিচ্ছুরণ দেখবে ইসরোর স্যাটেলাইট। পর্যবেক্ষণ করবে মহাকাশের ৫০টি শক্তির উৎসকে। এক কথায়, ভারতের মহাকাশ গবেষণায়  মাইলফলক হতে চলেছে।  আগামী পাঁচ বছর মহাকাশে কাজ করবে এই কৃত্রিম উপগ্রহ৷ জানা যাচ্ছে, এই স্যাটেলাইটের দাম ২৫০ কোটি টাকা।

আপাতত এক্সপোস্যাটকে রাখা হয়েছে পৃথিবী থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দূরের একটি কক্ষপথে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, ভূমি থেকে এই স্যাটেলাইটের সর্বোচ্চ উচ্চতা হবে ৫০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার। এক্সপোস্যাটে দু’টি পেলোড রয়েছে — পোলিক্স (পোলারিমিটার ইনস্ট্রুমেন্ট ইন এক্স-রে) এবং এক্সস্পেক্ট (এক্স-রে স্পেকট্রোস্কোপি অ্যান্ড টাইমিং)। এই পেলোডটি যৌথ ভাবে তৈরি করেছে রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার৷ 

এই স্যাটেলাইটের কাজ কী হবে?
এক্স-রে ফোটন ও তার পোলারাইজেশন ব্যবহার করে এক্সপোস্যাট কৃষ্ণগহ্বরের কাছের রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। নিউট্রন স্টার সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করবে এই স্যাটেলাইট। এই কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে পোলিক্স পে-লোডের থমসন স্ক্যাটারিং৷ মহাশূন্যে থাকা নিউট্রন স্টারের খোঁজখবরও নেবে এই স্যাটেলাইট।

 

মহাকাশে আজও বড় বিস্ময় কৃষ্ণগহ্বর৷ আশেপাশে থাকা সব কিছুকে যেন গিলে খেতে চায় ব্ল্যাক হোল৷। আকারে আয়তনে বিশাল হওয়ায় এরা মেজাজই আলাদা। ছায়াপথের ঠিক যেখানে এরা রয়েছে তার চারপাশে জমে থাকা পুরু গ্যাস ও ধুলোবালির মেঘ নিজের অন্ধকার গহ্বরে টেনে নিচ্ছে দানবের দল। এতদিন ‘গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং’ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্ল্যাকহোল নিরীক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এবার মহাশূন্যে পৌঁছে সামনে থেকে তাদের দেখবে ইসরোর স্যাটেলাইট।

মহাকাশে এক্স রশ্মির উৎস খোঁজার মধ্যে দিয়েই কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে গবেষণায় নতুন দিশা খুঁজে পাবে ইসরো। কৃষ্ণগহ্বরের উপস্থিতি, সন্ধান, উৎস প্রভৃতি নানা তথ্য চলে আসবে বিজ্ঞানীদের হাতে৷  মহাকাশে কোনও তারার ‘মৃত্যু’ হলে সৃষ্টি হয় কৃষ্ণগহ্বর এবং নিউট্রন স্টার। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সর্বোচ্চ মহাকর্ষীয় বলের অধিকারী হয় ব্ল্যাক হোল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *