isro
কলকাতা: ১৪ দিনের জীবনকাল নিয়ে গত ২৩ অগাস্ট চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’৷ এর কিছুক্ষণ পর ল্যান্ডারের পেটের ভিতর থেকে চাঁদে ভূমিষ্ঠ হয় রোভার ‘প্রজ্ঞান’৷ তার পরেই শুরু হয় তাদের চন্দ্রপৃষ্ঠে অনুসন্ধান৷ তবে আয়ু ফুরিয়ে আসছে দু’জনার৷ ইতিমধ্যেই প্রজ্ঞানকে ‘ঘুম পাড়িয়ে’ দেওয়া হয়েছে৷ কাজ করছে একা বিক্রম৷
পৃথিবীর হিসাবে ১৪ দিনে এক চন্দ্রদিবস। চাঁদে এই ১৪ দিনই সূর্যের আলো থাকে। পরের ১৪ দিন আবার ঢাকা পড়ে রাতের অন্ধকারে৷ তৃতীয় চন্দ্রযানে যে যন্ত্রগুলি রয়েছে, সেগুলি মূলত সৌরশক্তি পরিচালিত। ফলে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই অকোজো হয়ে যাবে বিক্রম বা প্রজ্ঞানের সমস্ত যন্ত্রাংশ৷ দিন ফুরলেই ১৪ দিনের টানা রাত নামবে চাঁদে। সেই রাত শেষে সূর্যোদয় হলে বিক্রম এবং প্রজ্ঞানে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখবেন বিজ্ঞানীরা। তবে সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বলেই জানানো হয়েছে।
মোট চারটি পেলোড নিয়ে চাঁদে গিয়েছে ল্যান্ডার বিক্রম৷ তারাই এখন চন্দ্রলোকের চারমূর্তি। চাঁদে তারা যে অনুসন্ধান চালাচ্ছে, তার উপরেই নির্ভরশীল ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এই চারটি পেলোডের মধ্যে প্রথমটি হল, ‘রেডিয়ো অ্যানাটমি অফ মুন বাউন্ড হাইপারসেন্সিটিভ আয়োনোস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার’। সংক্ষেপে রম্ভা৷ দ্বিতীয় পেলোড ‘চন্দ্রাস সারফেস থার্মো ফিজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট’। সংক্ষেপে চ্যাস্টে। এই পেলোডটির সংগ্রহে থাকা একাধিক কাজের নমুনা ইতিমধ্যে ইসরো প্রকাশ করেছে। তৃতীয় পেলোডটির নাম ‘ইনস্ট্রুমেন্টস ফর লুনার সিসমিক অ্যাক্টিভিটি’, সংক্ষেপে ইলসা। চাঁদের মাটির কম্পন ধরা পড়েছে এই পেলোডেই।
এ ছাড়াও বিক্রমের সঙ্গে চাঁদের দেশে পৌঁছে গিয়েছে আরও একটি পেলোড। তার নাম ‘দ্য লেসার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে’। সংক্ষেপে যাকে বলা হয়, এলআরএ বা অ্যারে৷ যে কিনা চন্দ্রাদেশে হয়ে উঠতে পারে ইসরোর ‘ব্রহ্মাস্ত্র’৷ কারণ, বাকিরা যখন ঘুমের দেশে হারিয়ে যাবে,তখন কাজ শুরু করবে এলআরএ৷
চন্দ্রযানের এই চতুর্থ পেলোডটি কিন্তু ইসরোর তৈরি নয়৷ এই পেলোডটি বানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এলআরএ-র জন্ম নাসার গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে৷ এর বৈশিষ্ট্য হল কোনও রকম সৌরশক্তি ছাড়াই এটি কাজ করতে সক্ষম। অন্যদের কাজ শেষ হলে শুরু হবে অ্যারের মিশন। প্রতিফলিত লেজার রশ্মি ব্যবহার করে কাজ করবে এই পেলোড। এর মধ্যে রয়েছে ১.২৭ সেন্টিমিটার ব্যাসের মোট আটটি গোলাকার রেট্রোরিফ্লেক্টর রয়েছে। সেগুলি ৫.১১ সেন্টিমিটার ব্যাসের ১.৬৫ সেন্টিমিটার উঁচু একটি গোলাকৃতি প্ল্যাটফর্মের উপর স্থাপিত।
রাত ঘনালে কী ভাবে কাজ করবে এলআরএ? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দূরের মহাকাশযানটির সঙ্গে অ্যারে-র সম্পর্ক স্থাপিত হলে তার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা হবে। সেটি থেকে পৃথিবীর দূরত্ব কতখানি, তাও অঙ্ক কষে বার করে নিতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদের গতিবিধি আরও স্পষ্টভাবে ধরে পড়বে৷ এলআরএ-র পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের অভিযানগুলির নীলনকশা গড়তে পারবে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। চাঁদের পিঠে তৃতীয় চন্দ্রযানের অন্যান্য যন্ত্রগুলি যখন ঘুমিয়ে পড়বে, তখন সজাগ থাকবে এলআরএ৷ কারণ, এর আয়ু এত দ্রুত ফুরিয়ে যাবে না। বরং তা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করবে৷ ফলে ভবিষ্যতের চন্দ্র অভিযানের রসদও সংগ্রহ করবে তৃতীয় চন্দ্রযানের চতুর্থ পেলোড।