ভারতের বেকারত্ব চর্চা এবার জাতিসংঘে! মুখ পুড়ল কেন্দ্রের?

নাগরিকত্ব ইস্যুর পাশাপাশি দেশের সাম্প্রতিকতম বহু চর্চিত বিষয়গুলির মধ্যে এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি ও বেকারত্বের ইস্যু দুটি কেন্দ্র সরকারকে বারবার প্রশ্নের মুখে ফেলছে৷ যদিও সবক্ষেত্রেই অতীতের উদাহরণ টেনে এনে এই সবকিছুর দায়ভার পূর্বতন সরকারের উপরে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী থেকে দেশের শাসক দলের শীর্ষস্থানীয় সমস্ত নেতা-মন্ত্রীরা৷

নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব ইস্যুর পাশাপাশি দেশের সাম্প্রতিকতম বহু চর্চিত বিষয়গুলির মধ্যে এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি ও বেকারত্বের ইস্যু দুটি কেন্দ্র সরকারকে বারবার প্রশ্নের মুখে ফেলছে৷ যদিও সবক্ষেত্রেই অতীতের উদাহরণ টেনে এনে এই সবকিছুর দায়ভার পূর্বতন সরকারের উপরে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী থেকে দেশের শাসক দলের শীর্ষস্থানীয় সমস্ত নেতা-মন্ত্রীরা৷

তবে এই মুহূর্তে জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট মোদি সরকারকে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিতে ফেলে দেবে৷ রিপোর্ট অনুসারে প্রতি পাঁচজন ভারতীয় তরুণ-তরুণীর মধ্যে কমপক্ষে দু'জনই কোনো কর্মহীন এমনকি তাদের পড়াশোনা বা কোনও প্রশিক্ষণের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র নেই, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান ভারতকে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার থেকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে৷

শুক্রবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সিচুয়েশন অ্যান্ড প্রসপেক্টস ২০২০-র প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ৪০শতাংশের বেশি ভারতীয়র ২০১০ থেকে ২০১৮-র মধ্যে শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে কোনো যোগসুত্র ছিলনা৷ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের প্রধান নাগেশ কুমার বলেছেন, জনসংখ্যার নিরিখে দেশের উন্নতি বৃদ্ধির জন্য  ভারতেকে শিক্ষার দিকে বেশি আলোকপাত করা উচিত৷ তিনি আরো বলেন ভারতের মত যুবশক্তি সম্পন্ন দেশে  শিক্ষা ক্ষেত্রের থেকে বড় বিনিয়োগ ক্ষেত্র আর কিছুই হতে পারে না৷

লেবার ইকোনমিস্ট প্রফেসর রবি শ্রীবাস্তবের মতে এই এনইইট (নট ইন এডুকেশন, এম্প্লয়মেন্ট অর ট্রেনিং) ক্যাটাগরির যুবক যুবতীরা কর্মসংস্থানের অভাবে বেশিরভাগ ঘরোয়া কাজকর্মে যুক্ত এমনকি সম্পূর্ণভাবে সংসারী৷ তবে পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের মেয়েরা কর্মসংস্থানের নিরিখে অনেক বেশি এগিয়ে৷ ভারতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছেনা বলেই এই 'এনইইট' শ্রেণী উচ্চহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এপ্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থান সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের তথ্য উল্লেখ করে প্রফেসর শ্রীবাস্তব বলেন, “এই পরিসংখ্যান বলছে ১৯৭২-১৯৭৩ সালের পর ২০১৭-২০১৮ সালে বেকারত্বের বৃদ্ধির হার সবথেকে বেশি (৬.১শতাংশ) ৷ যা বিশ্বের গড় বেকারত্বের অনুপাতে সামান্য হলেও বেশী৷ কারণ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে বেকারত্বের হার ২০০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক সংকটের আগে যা ছিলো তার  তুলনায় একটু কমে ৫ শতাংশ হয়েছে৷

গত এক বছরের তুলনায় বিশ্বব্যাপী বেকারত্ব হ্রাস পাওয়া,   মূলত উন্নত অর্থনীতির মাধ্যমে আরও বেশি কর্মসংস্থানের ফল৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ২০১২ সালে বেকারত্ব হ্রাস পেয়ে ৫০বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩.৬ শতাংশে৷ জাপানে বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ২.২ শতাংশ, যা ২৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সমানভাবে প্রবেশের সুযোগ থাকলে বেশি আয় এবং ভালো মানের চাকরি হিসেবে আরও উচ্চমান সম্পন্ন কাজের ক্ষেত্রগুলিতে যোগদানের বেশি সুযোগ থাকবে৷ কিন্তু ভারতের মত উন্নত দেশেও শিক্ষার মত মৌলিক অধিকার থেকে এখনও বঞ্চিত মেয়েরা এবং অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর শ্রেনীর বহু মানুষ৷ এই প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে যে মাধ্যমিক স্তর বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভারতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা উল্লেখজনকভাবে কম৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + three =