করোনা রুখতে পথ দেখাচ্ছেন বাঙালি গবেষক, কানাডার সঙ্গে যৌথ গবেষণা!

অরিঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁদের দল ইতিমধ্যেই সার্স কোভিড-২ ভাইরাসকে আলাদা করতে পেরেছেন। এই এজেন্ট ভাইরাসটিই কোভিড-১৯-কে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে, যা বাদুড় বাহিত।

কলকাতা: বিশ্বব্যাপী মহামারী ঘোষণা করা হয়েছে করোনা সংক্রমণকে। এই ভাইরাস  চীনের পর এখন একে একে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর ১৩২টি দেশে। বিগত তিনমাস ধরে এই ভাইরাসের কারণে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। অথচ এখনও পর্যন্ত এই মারণ ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক বা ওষুধের সন্ধান দিতে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন  চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তবে এরমধ্যেই বিশ্বকে আশার আলো দেখাচ্ছে কানাডার এক যৌথ গবেষকদল । কানাডার ম্যাকমাস্টার, সানিব্রুক এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এখানে একসাথে কাজ করছেন।

আর এই দলেই রয়েছেন একজন বাঙালি গবেষকও। নাম অরিঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়। তাঁর মতে, কিছুটা হলেও এই ভাইরাসকে অন্য ভাইরাসগুলির থেকে পৃথক করতে পেরেছেন তাঁরা। এই যৌথ গবেষণা গোটা বিশ্বকে পথ দেখাবে বলেই আশাবাদী অরিঞ্জয়। মারণ ভাইর নিয়ে গবেষণার সূত্রেই ২০০৮সালে এই বাঙালি গবেষকের নাম প্রকাশ্যে আসে।  ভারতীয় বংশোদ্ভূত অরিঞ্জয় কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিনের ওয়েস্টার্ন কলেজ থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে পিএইচডি করেছেন। এখন টরোন্টোর ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামিত রোগ বিভাগের গবেষক। 

অরিঞ্জয়ের কথায়, “করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে যা হচ্ছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে মহামারি রুখতে ভূমিকা নিতে পারছি, এটাও গর্বের।” ছোটোবেলায় তিনি তার বন্ধুদের বলতেন যে তিনি এমন একজন মানুষ হতে চান যে যেকোনো প্রাদুর্ভাবে দিনে সবাই তাকেই ডাকবে।  অরিঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁদের দল ইতিমধ্যেই সার্স কোভিড-২ ভাইরাসকে আলাদা করতে পেরেছেন। এই এজেন্ট ভাইরাসটিই কোভিড-১৯-কে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে, যা বাদুড় বাহিত। এই গবেষণালব্ধ তথ্য বাকি গবেষকদেরও দিতে চান তাঁরা। ফলে মিলিত প্রচেষ্টায়  প্রতিষেধক আবিষ্কার করার কাজ আরও সহজ হবে বলে মনে করছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর গবেষকদলের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করে গবেষেণায় এই প্রাথমিক সাফল্যের কথা জানিয়েছেন অরিঞ্জয়।

এপ্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন উদীয়মান রোগগুলির ৭৫% প্রাণীবাহিত। যেমন, সার্স, মার্স, ইবোলা মূলত প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে বাহিত রোগ। আর এক্ষেত্রে তাঁর মূল চিন্তা ভাবনা বাদুড় নিয়ে। এরমধ্যে বাদুড় এমন এক প্রাণী যা এইধরণের বহু মারণ রোগের ভাইরাস বহন করে। অথচ বাদুড় নিজেই ওই ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়না। আর এটাই অরিঞ্জয়ের বিশেষ কৌতূহলের বিষয় এবং সেই অর্থেই তাঁর গবেষণার মূল বিষয়। মূলত বাদুরের এই প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়েই গবেষণা তাঁর। মারণ ভাইরাসের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে মানুষের শরীরেও এইধরণের প্রতিরোধ গড়ে তোলার সূত্র খুঁজে চলেছেন এই বাঙালি বিজ্ঞানী। অরিঞ্জয়েরর কথায় “আমি ওয়ান হেলথের ধারণার প্রতি খুব আগ্রহী যা মানব, প্রাণী এবং পরিবেশের স্বাস্থ্যকে এক করে দেয়৷”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 3 =