চালের লাইনে NRI-দের লম্বা লাইন, যুদ্ধ- রফতানি বন্ধে সঙ্কটে বিশ্ব

চালের লাইনে NRI-দের লম্বা লাইন, যুদ্ধ- রফতানি বন্ধে সঙ্কটে বিশ্ব

কলকাতা: চাল আছে? উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপ, ভারতীয় গ্রসারি স্টোরগুলিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এই প্রশ্ন। হবে নাই বা কেন? সে মুকুলে যে এখন চালের আকাল! আসলে গত ২০ জুলাই থেকে বাসমতী বাদে অন্যান্য চাল বিদেশে রফনির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। উত্তর ভারতে অতিবৃষ্টি এবং অন্যত্র কম বৃষ্টির ফলে এই বছর দেশে ধানের ফলন মার খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের অভ্যন্তরে চালের জোগান এবং দাম ঠিক রাখতে রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা, কানাডা সহ ইউরোপে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে চাল কেনার হিড়িক পড়েছে৷ গ্রসারি স্টোর থেকে বস্তা বস্তা চাল কিনে বাড়িতে মজুত করতে শুরু করেছেন অনাবাসী ভারতীয় পরিবারগুলি। প্রায় প্রতিটি ভারতীয় স্টোরের বাইরে দেখা যাচ্ছে লম্বা লাইন।

টেক্সাস, মিশিগান, নিউ জার্সিতে বহু সংখ্যক তেলুগু পরিবারের বাস। তাঁদের মধ্যে সোনা মসুরি চালের চাহিদা সর্বদাই তুঙ্গে। ফলে সেই চালের স্টক ঝটপট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ গ্রসারি স্টোরেই ৯ কেজির চালের বস্তার দাম পৌঁছেছে ২৭ ডলারে (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২,২১৩ টাকা)৷  ওহায়োর ম্যাসনের দোকানগুলো আবার ক্রেতা পিছু ৯ কেজির এক বস্তার বেশ চাল দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এর জন্য গুণতে হবে ২৪ ডলার৷ যা ভারতীয় মুদ্রায় ১,৯৬৭ টাকা। তবে শুধু অনাবাসী ভারতীয় নয়, চিনা, জাপানি, মেক্সিকান, থাই এবং আমেরিকার আরও কিছু অভিবাসীদের মধ্যেও ভাত খাওয়ার প্রচলন রয়েছে, ফলে চালের চাহিদা সেখানেও কিন্তু কম নয়৷ 

আলাবামা, ইলিনয়েও চালের চাহিদা ক্রমে বাড়ছে৷ তবে পরিস্থিতি আমেরিকা, ইউরোপের মতো অতটাও গুরুতর নয়। সেখানে স্টক রয়েছে৷ তবে দাম বাড়ার ভয়ে অনেকেই আগেভাগে চাল মজুত করতে শুরু করেছেন৷ আবার পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিন-ও ভারতীয় চালের অন্যতম খরিদ্দার। তবে সেখানে এখনও পর্যন্ত চালের জন্য এমন হাহাকারের খবর নেই। 

আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চলতি মরশুমে চাষাবাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার জেরে ভারতীয় বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম চড়া৷ থলে হাত বাজারে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে আমজনতা। প্রকৃতির প্রতিকূলতার শিকার হতে হচ্ছে অন্যান্য দেশকেও৷ এমতাবস্থায় অভ্যন্তরীণ খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রফতানি বন্ধের উপর জোর দিতে শুরু করেছে ভারত সহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই। অন্যদিকে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত সাপ্লাই চেইন। এখন এই ত্রিমুখী বিপদে তীব্র খাদ্য সঙ্কটের দিকে এগিয়ে চলেছে বিশ্ব৷ এমনটাই মনে করছেন তাবড় পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদরা।

ইতিমধ্যেই আফ্রিকার দেশগুলিতে খাদ্য সঙ্কট মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে৷ উন্নত বিশ্বেও লাফিয়ে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম৷ প্রবল গরমের দাপটে ইউএসএ থেকে চিন, বিশ্বের বিস্তৃত এলাকায় নষ্ট হচ্ছে ফসল। এর উপর ক্রমেই নিম্নমুখী ফল এবং দুধের উৎপাদন। চলতি সপ্তাহেই বাসমতী ছাড়া অন্য সব ধরনের চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। মনে রাখতে হবে, গোটা বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা চালের উপর নির্ভরশীল। দেশের বাজারে যাতে চালের দাম ছ্যাঁকা দিতে না পারে, সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতে চালের দাম গড়ে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷

চালের পরেই উল্লেখযোগ্য খাদ্যপণ্য হল গম৷ অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে ভারত। কিন্তু, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে সেই প্রক্রিয়া ব্যহত৷ ব্ল্যাক সি পার করে শস্য রফতানির যে চুক্তি রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ছিল, সেই চুক্তি ভেঙে দিয়েছে রাশিয়া। এর ফলে সে দেশ থেকে ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শস্য রফতানিও জটিলতার মুখে পড়েছে।

সুদূর লন্ডনেও খাদ্যশস্য নিয়ে একই রকম উদ্বেগের ছবি ফুটে উঠেছে। সে দেশের চ্যাটহ্যাম হাউসের খাদ্য সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ টিম বেন্টনের কথায়, ‘‘আমরা এখনও মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করে চলেছি৷ মূল্যবৃদ্ধি কমতে শুরু করলেও পণ্যের দাম যে কমবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।’ অন্যদিকে, দক্ষিণ ইউরোপে প্রচন্ড গরমে গরু অনেক কম দুধ দিচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টম্যাটো। এশিয়ার মধ্যে যদি চিনের কথা বলা হয়, তাহলে সেদেশের ধানজমি থেকে ভালো ফসল নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। আবার গত জুনে, তিন দশকের সব থেকে খারাপ ফলন দেখেছে আমেরিকা৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × one =