করোনার জাঁতাকলে পিষ্ট ২০২০ ইতিবাচক যা কিছু রেখে গেল

করোনার জাঁতাকলে পিষ্ট ২০২০ ইতিবাচক যা কিছু রেখে গেল

20b7bbe6ebb49df5db9fbfe986c5b957

 নয়াদিল্লি: ২০২০। রোগদীর্ণ, মৃত্যু বিভীষিকাময়, অসুস্থ একটা বছর। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে বিশ-মুক্ত হয়েছে বছর৷ এসেছে নতুন বছর৷ ভালো কিছুর জন্য অধীর অপেক্ষায় গোটা পৃথিবী৷ সঙ্গে রয়েছে একরাশ আশা, সুস্থ স্বাভাবিক বেদনাহীন একটা পৃথিবীর আশা৷ করোনা ভাইরাসের অতিমারীর গত বছরজুড়ে চালিয়েছে ধ্বংসলীলা। বহু মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকেই এলোমেলো করে দিয়েছে করোনার বিভীষিকা। কিন্তু করোনা কি শুধুই নিয়েছে? বছর শেষে ২০২০-র প্রাপ্তির খাতাতে একবার চোখ বোলালে দেখা যায়, একুশের জন্য কুরির বছর রেখে যাচ্ছে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক৷

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ গোটা বিশ্বের কাছে ছিল সম্পূর্ণ আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত। তাই করোনার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে উঠতেই পৃথিবীর বুক থেকে খরচ হয়ে গেছে বহু নিষ্পাপ প্রাণ। তবে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের পরিকাঠামো অতিমারীর ধাক্কায় যতটা ভেঙে পড়ার কথা ছিল ততটা কিন্তু হয়নি। বরং করোনা মোকাবিলায় ভারতের মার্কশিট বেশ উজ্জ্বল। ভারতে এ পর্যন্ত করোনার কোপে যে দেড় লাখ মানুষের প্রাণ গেছে, বা অতিমারী যাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেও বলা যায়, এ দেশের করোনা পরিস্থিতি অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অনেকটাই ভালো। দেখা গেছে, অতিমারীর ফলে মানুষ স্বাস্থ্য বিধি, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং গবেষণা সম্পর্কে অনেক বেশি করে সচেতন হয়েছেন।

এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ভারতীয়দের ভাগ্যকে কৃতিত্ব দেওয়া ছাড়া উপায় নেই, অন্তত যতদিন পর্যন্ত না গত ৩ মাসে সংক্রমণের হার কমে যাওয়ার বিজ্ঞানসম্মত কারণটা জানা যাচ্ছে। ভোট, উৎসব আর আনলক প্রক্রিয়ার পরেও এই সংক্রমণ হ্রাস নিঃসন্দেহে করোনা ধোঁয়াশার মাঝে একরাশ অক্সিজেনের মতোই স্বস্তিদায়ক। তাই বলে এ দেশে করোনার প্রভাবকে একেবারে তুচ্ছ করারও উপায় নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে লকডাউন প্রক্রিয়া আরো ভালোভাবে বাস্তবায়িত করা উচিত ছিল। দেশ জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণার চিত্রটাও বহুদিন পর্যন্ত ইতিহাসের পাতায় আঁকা থাকবে। তবে সমস্যা থেকেই শিক্ষা নিয়েছে ভারত। তাই আশা করা যায় আগামী দিনে এই অভিজ্ঞতা জনগণের কল্যাণেই কাজে লাগবে।

করোনার ধাক্কা ভারতের এযাবৎ কাল ধরে গড়ে ওঠা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দাঁড় করিয়েছিল বড়সড় প্রশ্নের মুখে। সেখানেও লেটার মার্কস নিয়েই পাশ করেছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। পুনের একটি ল্যাবরেটরি থেকে প্রথম করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছিল, মাত্র কয়েকদিনের মাথায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ১৫০০ ল্যাবরেটরি পরীক্ষা শুরু করে। দিনে ১৪-১৫ লাখ পরীক্ষা এরপর ছিল জলের মতোই সহজ। করোনা চেন রুখতে ব়্যাপিড টেস্টের ভূমিকা সম্পর্কে সকলেই অবহিত। এছাড়া, টেস্টিং কিট, পিপিই কিট সহ অন্যান্য প্রযুক্তির অভাবকেও খুব বেশিদিন স্থায়ী হতে দেয় নি ভারত। করোনা মোকাবিলায় দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোর ভূমিকাও ছিল অনস্বীকার্য।

তবে কি ২০২০-তে করোনা মোকাবিলায় সম্পূর্ণ সফল ভারত? বলা বাহুল্য, তা কিন্তু নয়। তবে শীঘ্রই মারণ ভাইরাসের টিকা বাজারে আসা সম্বন্ধে আশাবাদী সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। একুশের প্রথম দিকেই হয়তো হাতে আসতে চলেছে বহু প্রতীক্ষার সেই করোনা ভ্যাকসিন। করোনা পরিস্থিতির সুফল হিসেবে আর একটা বিষয় না বললেই নয়। এই অতিমারীর ফলে নিঃসন্দেহে ভারত সরকার আত্মনির্ভরতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছে, দেশের বিজ্ঞান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটা কম আশার কথা নয়। আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারত সরকারের আহ্বান বারবার প্রমাণ করেছে সেই কথাই। তাই সব শেষে বলা যায়, ২০২০-র মৃত্যু উপত্যাকাকে পার করে আসছে একুশের নতুন সকাল, যে সকালে আছে আশা, আছে সব হারিয়েও হার না মানার এক চিরন্তন জেদ। শেষ বেলায় তাই বারবার মনে পড়ে যায় জীবনানন্দ দাশের সেই অমর পংক্তি, “পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন, মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *