stroke
কলকাতা: জীবনের ইঁদুর-দৌড় যত বাড়ছে ততই বাড়ছে রোগভোগ। স্ট্রোক, হৃদরোগের সমস্যা এখন রীতিমতো প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে তিরিশ পেরনো যুবক-যুবতীদের ক্ষেত্রে। কয়েক দশক আগেও পঞ্চাশোর্ধ্ব বা ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে ব্রেন স্ট্রোকের প্রবণতা দেখা যেত। গত কয়েক বছরে সেই ছবিটা একেবারেই বদলে গেছে। ২৫ ঊর্ধ্বদেরও ব্রেন স্ট্রোক আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলছে। কেন বাড়ছে স্ট্রোকের প্রবণতা? আক্রান্তের তালিকায় কমবয়সীরাই বা কেন? সেই বিষয়ে জানার আগে প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক প্রাণঘাতী এই রোগের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
স্ট্রোক কী?
স্ট্রোক সাধারণত দুধরনের- ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং হ্যামারেজ স্ট্রোক। ইস্কেমিক স্ট্রোকে ধমনির ভিতরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেই অংশটি মরে যায়। হ্যামারেজ স্ট্রোকে ধমনি ছিঁড়ে গিয়ে শরীরের ভিতরেই রক্তক্ষরণ হয়। কোন ধরনের স্ট্রোক হয়েছে রোগীর, তা বুঝতে প্রথমেই সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কারণ, এই রিপোর্টের উপর নির্ভর করেই হয় চিকিৎসা। অনেক সময় মাইল্ড স্ট্রোকও দেখা যায়। এই স্ট্রোকে রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ সাময়িক বন্ধ হয়ে আবারও চালু হয়ে যায়। সাধারণত, মাইল্ড স্ট্রোককে বড় ধরণের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
গুরুতর এই স্বাস্থ্য সমস্যার দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে রোগী পঙ্গু হওয়ার পাশাপাশি তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে স্ট্রোকের চিকিৎসা করা জরুরী।
দূষণে ভরা আবহাওয়া স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। দূষিত বাতাসে থাকা ন্যানো পার্টিকল, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড প্রশ্বাসের সঙ্গে ক্রমাগত ফুসফুসে ঢুকছে। পরে সারা শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ছে। শরীরকে ভিতর থেকে দূষিত করে দিচ্ছে এই স্ব দূষিত পদার্থ। যা স্ট্রোকের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ।
চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস আক্রান্তদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। কর্মক্ষেত্রের চাপ, আধুনিক ব্যস্ত জীবনের জটিলতা হাইপারটেনশনের সমস্যা ডেকে আনছে ডায়াবেটিসের সমস্যা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্ট্রোক। গবেষণায় দেখা গেছে নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কম বয়সীদের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ার মূল কারণ হল দৈহিক কসরত না হওয়া। হাটাচলার অভ্যাস কমে যাওয়া।
যে কারণে বাড়ছে বিপদ
• স্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে অনেক বেশি ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড নির্ভর হয়ে পড়ছে নয়া প্রজন্ম।
• সুস্থ থাকতে ৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। কিন্তু জীবনযাত্রা বা কাজের চাপে সেই ঘুম হচ্ছে না। যার অবশ্যম্ভাবী ফল হতে পারে স্ট্রোক।
• বাড়তে থাকা মানসিক চাপ।অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান, মদ্যপান স্ট্রোকের জন্য দায়ী।
• জিনগত কারণেও কমবয়সিদের মধ্যে হতে পারে স্ট্রোক।
রক্তবাহের ভিতরের দেওয়ালে কোলেস্টরল বা চর্বি জমে ধমনি সরু করে দেয়। যাকে মেডিক্যাল পরিভাষায় বলা হয়, অ্যাক্রোস্কেলোরসিস। ইউরোপ, আমেরিকার বাসিন্দাদের মধ্যে এই প্রবণতা সাধারণত ৩৫-এর পর দেখা যায়। কিন্তু ভারত তথা দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে ২৫-এর পরেই এই প্রবণতা তৈরি হয়ে যায়। যা অত্যন্ত অল্পবয়সেই স্ট্রোক ডেকে আনে।
সাধারণত কোনও ওয়ার্নিং দিয়ে স্ট্রোক আসে না। তবে সময়মতো স্ট্রোকের চিকিৎসা করালে মৃত্যুমুখ থেকে রোগীকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। চিকিৎসকরা বলছেন, স্ট্রোক লক্ষণ দেখা দেয়ার পর থেকে তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় খুবই ক্রিটিকাল। এই সময়ের মধ্যে বা তার আগে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে মৃত্যু-ঝুঁকি অনেকটাই কমে।