কলকাতা: পৃথিবী থেকে দূরবীনে চোখ রেখে চাঁদের দুনিয়ায় হারিয়া যাওয়ার ইচ্ছে বা সখ, অনেকেরই থাকে৷ চাঁদের দেশ নিয়ে কৌতুহলের খামতি নেই মহাকাশপ্রেমীদের৷ ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। লেখা হল ইতিহাস৷ চাঁদের পিঠে পা রাখল মানুষ৷সফল হল নাসার চন্দ্রযান৷ ‘স্যাটার্ন ৫’ রকেটে চেপে চাঁদে পৌঁছল ‘অ্যাপোলো ১১।’ প্রথম চাঁদের মাটিতে পা দিলেন কম্যান্ডার নীল আর্মস্ট্রং এবং এডুইন (বাজ) অলড্রিন। নুড়ি-কাঁকড়ে ভরা চাঁদের রুক্ষ ভূমিতে উড়ল মার্কিন পতাকা। মানবসভ্যতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হল এই অধ্যায়। ক্যালেন্ডারের পাতায় ২০ জুলাই দিনটাকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করে রাখলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। ইতিহাসের পাতায় বিশেষভাবে জায়গা করে নিলেন চাঁদে পা রাখা বিশ্বের প্রথম দুই মার্কিন মহাকাশচারী। বিশ্বজোড়া অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসলেন তাঁরা। এর পর দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৫৪টা বছর। এর পর বিভিন্ন দেশের বহু মহাকাশযান চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে৷ বেশ কিছু সফলও হয়েছে। তবে ইতিহাসের শুরুর দিনটা আজও অমলিন রয়েছে৷
প্রথম চন্দ্রাভিযানের ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০ জুলাই পুরনো স্মৃতিচারণ করছে নাসা। অ্যাপোলো ১১-এর উৎক্ষেপণের অ্যানিমেশন ভিডিয়ো বানিয়ে তিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং, এডুইন (বাজ) অলড্রিন এবং মাইকেল কলিনসকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছে সার্চ ইঞ্জিন গুগল।
১৬ জুলাই ফ্লোরিডার মেরিট আইল্যান্ডের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ‘স্যাটার্ন ৫’ রকেটের চড়ে চাঁদের পথে পাড়ি দেয় অ্যাপোলো লুনার মডেল ‘ঈগল।’ চার দিন পর ২০ জুলাই চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়ে মার্কিন মহাকাশযান অ্যাপোলো। এর ৬ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট পর চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং। তার ঠিক ১৯ মিনিট পরে অ্যাপোলো থেকে নামেন এডুইন বাজ অলড্রিন। সব চাঁদের মাটি স্পর্শ করেন পাইলট মাইকেল কলিনস। সফল হয় নাসার চন্দ্রাভিযান৷ বিশ্বজুড়ে সম্প্রচারিত হয় সেই খবর। যদিও ‘অ্যাপোলো-১১’-এর চন্দ্রাভিযানের ছবি এবং ভিডিয়ো বেশ কিছুদিন পর প্রকাশ করেছিল নাসা৷
নাসার দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, স্পেসক্রাফ্টের বাইরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা চন্দ্র-ভ্রমণ করেছিলেন নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন। চাঁদের পিঠ থেকে সংগ্রহ করে এনেছিলেন ৪৭.৫ পাউন্ড (২১.৫ কেজি) নমুনা বা ‘লুনার মেটিরিয়াল।’
পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ এবং ফের পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন- গোটা মিশনটা সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিন ৮ দিন ৩ ঘণ্টা এবং ১৮ মিনিট। তবে নাসার এই চন্দ্রাভিযান নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি৷ নাসার ‘অ্যাপোলো প্রোগ্রাম’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে চর্চা হয়েছে বিস্তর৷ নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিনরা সত্যিই কি চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন? প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে৷ মানবজাতির ‘প্রথম চন্দ্র-বিজয়’-এর যে সকল ছবি ও ভিডিয়ো নাসা সামনে এনেছিল, সেটা আদৌ সত্যি কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি খোদ আমেরিকা নিজের দেশের প্রথম চন্দ্রাভিযানের সত্যতাকে নস্যাৎ করেছিল। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উপদেষ্টা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডেভিড গেলার্নটার এক সময়ে বসেছিলেন, চাঁদের মাটিতে নাকি পাই রাখেননি আর্মস্ট্রং। এই বক্তব্যের সমর্থনে বিশ্বজুড়ে একাধিক প্রমাণ তুলে ধরা হয়৷ বলা হয়, চাঁদের মাটিতে পোঁতা মার্কিন পতাকা দেখে মনে হয়েছে যেন সেটি হাওয়ায় দোদুল্যমান। অথচ চাঁদে বায়ুমণ্ডলের অস্তিত্বই নেই৷ বাতাস-হীন চাঁদের মাটিতে পতাকা উড়ল কী ভাবে?
দ্বিতীয়ত, চাঁদে আলোর একমাত্র উৎস সূর্য। কিন্তু, নাসার প্রকাশিত ছবিতে বিভিন্ন বস্তুর বিভিন্ন রকমের ছায়া দেখা গিয়েছে। যা আলোর একাধিক উৎস ছাড়া সম্ভব নয়৷ এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নাসার দাবি ছিল, চাঁদের বুকে সূর্যের আলো পাহাড়ে প্রতিফলিত হওয়া এই বিভ্রান্তি৷
তৃতীয়ত, চন্দ্রাভিযানের যে সব ছবি নাসা প্রকাশ করেছিল, তাতে দেখা গিয়েছিল মহাকাশচারীর হেলমেটের কাচে একটি অস্পষ্ট ছবি ফুটে উঠেছে৷ দেখে মনে হচ্ছে দড়ি বা তারে ঝুলছে কোনও একটি বস্তু। এমন দৃশ্য নাকি ফিল্ম স্টুডিওয় দেখা যায়! এমনটা দাবি করেছিল বিজ্ঞানীদের একাংশ।
‘অ্যাপোলো ৫০: গো ফর দ্য মুন’-এর আবহেই চাঁদের অভিমুখে রওনা দিয়েছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩। সফল উৎক্ষেপণের পর ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তৃতীয় চন্দ্রযান পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের মায়া কাটিয়ে চাঁদের পথ ধরে নিয়েছে। চন্দ্রযান-২ পুরোপুরি সফল হয়নি। সেই ব্যর্থতার গ্লানি ঘুঁচিয়ে ভারত কি পারবে চাঁদের মাটিতে দেশের বিজয় পতাকা ওড়াতে! সেই অপেক্ষায় প্রহর গুণছে অগনিত ভারতবাসী।