গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরির নামে দেশজুড়ে প্রতারণা, সতর্কবার্তা কেন্দ্রের

প্রতারকদের কর্মপদ্ধতি দেখে বলিউউডের 'স্পেশাল ২৬' সিনেমার কথা মনে পড়ে যেতেই পারে। আইবি বিভাগের লোগো ও নাম নকল করে ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আইবিতে বিভিন্ন পদে লোক নেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। এমনকী দৈনিক সংবাদপত্রেও অনলাইন বা অফলাইন আবেদনপত্র জমা দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।

নয়াদিল্লি: আনলক পর্বের মধ্যেই পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরি, তাও আবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায়! উত্তরপ্রদেশের স্বদেশ মিশ্র নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাই উল্লিখিত সময়ে হাজির হয়েছিলেন নয়াদিল্লির চাণক্যপুরি আইবি হেডকোয়ার্টারে। তারপরেই স্বপ্নভঙ্গ। নিয়োগপত্র আদতে ভুয়ো, চাকরির নাম করে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। নিরাপত্তা রেখা পেরিয়ে সরকারি চিঠিটা জমা দিয়েছিলেন দফতরে। তারপর অপেক্ষা করছিলেন ভিতর থেকে ডাক পাওয়ার। ডাক এলও, কিন্তু ভেতরে গিয়ে তিনি যা শুনলেন তাতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। বন্ধ ঘরে বসিয়ে স্বদেশকে জিজ্ঞাসাবাদ চালান আইবি আধিকারিকরা। ততক্ষণে তাঁরা বুঝে গিয়েছেন স্বদেশের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। 

এই ঘটনা প্রথম নয়। জানা গেছে লকডাউনের আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০-৮০টি এই ধরনের ভুয়ো নিয়োগপত্র জমা পড়েছে আইবি-র দফতরে। শুধু কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই নয়, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো আইবির আঞ্চলিক শাখাগুলিতেও এই ধরনের ভুয়ো নিয়োগপত্র হাতে উপস্থিত হয়েছেন বহু বেকার যুবক যুবতী। এমনকী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছেও এই সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে। এরপরেই বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে আইবি-র তরফে। চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একাধিক সতর্কবাণী প্রচার করা হয়েছে। পাশাপাশি এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড়ের কাজ শুরু করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। 

প্রতারকদের কর্মপদ্ধতি দেখে বলিউউডের 'স্পেশাল ২৬' সিনেমার কথা মনে পড়ে যেতেই পারে। আইবি বিভাগের লোগো ও নাম নকল করে ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আইবিতে বিভিন্ন পদে লোক নেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। এমনকী দৈনিক সংবাদপত্রেও অনলাইন বা অফলাইন আবেদনপত্র জমা দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। ফর্ম জমা নেওয়ার পর পোস্টাল চার্জ নেওয়া হচ্ছে। অ্যাডমিট কার্ড ডাক মারফত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষার জন্য দিল্লিতে ডাক পড়ছে এবং সেখানেই চলছে টাকার খেলা। পদ অনুযায়ী এই টাকার অঙ্ক পাঁচ থেকে ১০ লক্ষে ওঠানামা করছে। পরীক্ষায় সফল হওয়া পরীক্ষার্থীদের জাল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার পর তাদের কাছে নিয়োগপত্র পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু তা নিয়ে আইবি অফিসে গেলেই প্রার্থীরা বুঝতে পারছেন তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। 

আইবির যে বিভাগ এই পরীক্ষা নেওয়ার সঙ্গে জড়িত তারা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। তাদের ধারণা এই চক্রের মূল পান্ডারা দিল্লিতেই রয়েছে, যদিও টাকা নেওয়ার জন্য প্রতি রাজ্যেই তাদের শাখা রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। মোট প্রতারণার অঙ্ক কত সে সম্পর্কেও তদন্ত চলছে। চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বার্তা, আইবি পরীক্ষার জন্য অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়, অফলাইনে নয়। নিয়োগের জন্য ইউপিএসসি, এসএসসি, বা এমএইচএ পোর্টালে এবং ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। অন্য ওয়েবসাইট দেখে আবেদনকারীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার বার্তা দিয়েছে মন্ত্রক।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × five =