নয়াদিল্লি: বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর৷ তবুও কর্তব্যে অবিচল৷ শেষ বেলাতেও সে অপ্রতিরোধ্য৷ এক সময় চিতার মতো শত্রু শিবিরের তাবড় তাবড় ফাইটার জেট ধ্বংস করেছিল সে৷ তবে আর সঙ্গ দিচ্ছে না বয়স৷ অবসর নিচ্ছে ভারতীয় বায়ু সেনার ‘মিগ ২১’-এর ৫১ নম্বর স্কোয়াড্রন৷ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে আর আকাশে পাখা মেলবে না এই ফাইটার জেট৷
আরও পড়ুন- সপ্তাহের শুরুর দেশের কোভিড গ্রাফ স্বস্তির, টিকাকরণে দাপট
তিনবছর আগে এই স্কোয়াড্রনের বিমান নিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পাক এফ-১৬ ফাইটার জেট গুলি করে নামিয়েছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। ভারতীয় বায়ুসেনা আদর করে এই স্কোয়াড্রনের নাম দিয়েছিল ‘সোর্ড আর্মস’। ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ভারতে ঢুকে পড়ে বেশ কয়েকটি পাক ‘এফ-১৬’ যুদ্ধবিমান। আকাশে শত্রুবিমান দেখার সঙ্গে সঙ্গে ‘মিগ ২১ বাইসন’ ফাইটার জেট নিয়ে তাদের তাড়া করেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান।
মাঝ আকাশে ‘ডগ ফাইটে’ রীতিমতো কেরামতি দেখিয়ে একটি পাক ‘এফ-১৬’ ফাইটারকে গুলি করে নামান অভিনন্দন। তবে শত্রুনিধন করতে গিয়ে ভেঙে পড়েছিল অভিনন্দনের নিজের ‘মিগ ২১ বাইসন’ যুদ্ধবিমানটিও৷ বিমান থেকে ছিটকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়ে পড়েন উইং কমান্ডার। সেখানে পাক সেনার হাতে বন্দি হন তিনি৷ তাঁকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে পাক সেনা৷ কিন্তু একটা কথাও তাঁর মুখ থেকে বার করা যায়নি৷ ৬০ ঘণ্টা পাকিস্তানে আটকে ছিলেন তিনি৷ পরে অবশ্য চাপের মুখে পড়ে অভিনবকে ভারতে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় ইসলামাবাদ।
অবসরের মুখে এসেও নিজের ‘জাত’ চিনিয়েছে মিগ-২১৷ দীর্ঘদিনের যাত্রাপথে বরাবর কর্তব্যে অবিচল থেকে গৌরবময় ইতিহাসও গড়েছে এই যুদ্ধবিমান। কিন্তু বারবার ভেঙে পড়ার ঘটনায় প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে৷ ভারতে ‘মিগ ২১’ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় দেড়শোর বেশি ফাইটার পাইলট। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৪০০-র বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ‘মিগ ২১’ যুদ্ধবিমান। ফলে ধীরে ধীরে ‘মিগ-২১’-এর ব্যবহার বন্ধ করতে শুরু করে ভারতীয় বায়ু সেনা। সর্বশেষ যে ৪টি স্কোয়াড্রন ছিল, তার মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর অবসর নেমে একটি। ২০৩০-র মধ্যে ধাপে ধাপে অবসর নেবে আরও ৩টি স্কোয়াড্রন।
১৯৫৫ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন মিগ-২১ যুদ্ধবিমানটি তৈরি করে। ১৯৬২ সালে চিন যুদ্ধের পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এই ফাইটার জেট কেনে ভারত। কিন্তু, মিগের সূচনা সুখকর ছিল না৷ ভারতের আকাশে মিগ-২১ পাখা মেলার কয়েকদিনের মধ্যেই ১৯৬৩-র ডিসেম্বরে প্রথমবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এই ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট। ১৯৮৫ সালে মিগের এই মডেলটি বানানো বন্ধ করে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। ফলে মিগের রক্ষনাবেক্ষণ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় ভারতকে। গত বছর ৫ বার দুর্ঘটনার মুখে পড়ে মিগ-২১। মৃত্যু হয় ২ জন পাইলটের।
চলতি বছরও দুর্ঘটনার চিত্র পাল্টায়নি৷ গত ১৭ মার্চ গোয়ালিয়ার এয়ারবেস থেকে টেক-অফের অনতিবিলম্বে ভেঙে পড়ে মিগ-২১। মৃত্যু হয় গ্রুপ ক্যাপ্টেন আশিস গুপ্তর। গত ২০ মে রাজস্থানের সুরাটগড়েও ঠিক একই ভাবে ভেঙে পড়ে মিগ-২১। প্রাণ হারান ২৮ বছরের স্কোয়াড্রন লিডার অভিনব চৌধুরী।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>