কলকাতা: কখনও যাদবপুর, কখনও মুকুন্দপুর। কখনও বা বাঘাযতীন, গড়িয়াহাট, কিংবা টালিগঞ্জ। ‘জোটে ভোট বুক চিতিয়ে’ স্লোগান নিয়ে ‘হাল্লা গাড়ি’ ছুটছে দক্ষিণ কলকাতার আনাচে-কানাচে। চলছে অভিনব প্রচার। ১৯-২০ জনের দল চষে বেড়াচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন অলিগলি। জনপ্রিয় গানের প্যারোডি গেয়ে নাচের তালে পথ নাটক দেখিয়ে চলছে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের প্রচার। আর এই পুরো ঘটনার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তরুণ নাট্যকার সৌরভ পালোধি ও সৈকত ঘোষ।
গত বুধবার যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অজয়নগর মোড় থেকে শুরু হয়েছে যাত্রা। তারপর থেকে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জনপ্রিয় জায়গায় রাস্তার উপরেই মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে একদল তরুণ-তরুণী গান গেয়ে, শারীরিক কসরত ও পথনাটিকার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবন যুদ্ধের কাহিনী তুলে ধরছে। শোনাচ্ছে তৃণমূল-বিজেপির দুর্নীতির কথা, ষড়যন্ত্রের কথা। মানুষকে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীকে বেছে নিতে আহ্বান জানাচ্ছে। পথচলতি সাধারণ মানুষও থমকে গিয়ে ভিড় জমিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও উপভোগ করছেন এই অভিনব নির্বাচনী প্রচার। কিন্তু হঠাৎ এই পথ কেন? নাট্যকার সৌরভ পালোধি জানালেন, “আমরা চাইলেই যে কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে পরপর গণসংগীত গেয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু তাতে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারতাম না। কোনও সংবাদমাধ্যম প্রচার করত না। তাই এই চেষ্টা। এই প্রচারের মধ্যে অভিনবত্ব আছে, যা মানুষকে কাছে টানছে।”
কিন্তু এই ‘হাল্লা গাড়ি’ নাম কেন? সৌরভ এই নিয়ে জানালেন, “শহীদ নাট্যকার সফদার হাশমির ‘হাল্লা বোল’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই নামটি নেওয়া। আমরা একটা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। তাতে একটা কাপড় ঝুলিয়ে লিখে দিয়েছি ‘জোটে ভোট বুক চিতিয়ে’।” কিন্তু এরকম একটা ভ্রাম্যমান প্রচার চলছে কীভাবে? গাড়ির তেলের খরচ এবং উনিশ-কুড়িটা ছেলেমেয়ের খরচ উঠছে কিভাবে? সৌরভ জানালেন, “সেদিন কসবায় এক রিক্সাচালক তার রিক্সা থামিয়ে আমাদের পুরো উপস্থাপনা দেখলেন। সবশেষে আমাদেরই এক সদস্যের হাতে ৫০ টাকা দিয়ে গেলেন। আবার গড়িয়ার এক অটোচালক, কোনওভাবে তার সংসার চলে। তাও তিনি আমাদের ১০০ টাকা দিয়ে গিয়েছেন। তাছাড়াও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে শিক্ষক আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যে প্রার্থীর এলাকায় আমরা প্রচার করছি তারাও সাহায্য করছেন। এভাবেই চলছে হাল্লা গাড়ি।”
কিন্তু কত দিন? এমন অভিনব প্রচারের ভবিষ্যৎ কী? কত দিন চলবে এই প্রচার? সৌরভ সাফ জানালেন, “গাড়ির তেলের খরচ আর ছেলেমেয়েগুলোর খাওয়া-দাওয়ার খরচটা উঠে গেলেই হবে। রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভায় গিয়ে আমাদের এই প্রচার করার ইচ্ছে রয়েছে। আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আমরা আমাদের এই প্রচার চালিয়ে যাব। ভিক্ষা করেও চালাব, কিন্তু কাজ বন্ধ করবো না।”
একুশের নির্বাচনে বামেদের নিয়ে কতটা আশাবাদী? তরুণ নাট্যকারদের জবাব, “১০০ শতাংশ আশাবাদী। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমি নিশ্চিত পশ্চিমবঙ্গে এবার জোট সরকার ক্ষমতায় আসবে। বামেদের ৭ শতাংশ ভোট নিয়ে অনেক খিল্লি করেন। এই ৭ শতাংশ আসলে ইডিওলজিক্যাল ভোটার। বাকিরা ফ্লোটার। বাম ছেড়ে একসময় তৃণমূলে ভোট দিয়েছেন। মাঝে একটা সময় তৃণমূল আর ভালো লাগছে না বলে বিজেপিকে ক্ষমতায় চেয়েছেন। কিন্তু এখন দেখছেন বিজেপির ১০০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৮০ জনই তৃণমূলের। আর যাই হোক, তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি হতে পারে না। শুধুমাত্র ভোটে জিতবে বলে মানুষের টাকা নয়-ছয় করে ‘রিপাব্লিক টিভি’ চ্যানেল খুলবে। এই যদি জেতার পদ্ধতি হয় তাহলে আমরা যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিনটাই করব। রোজ অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন তো অসময়ে মানুষের মুখে তুলে দিতে পারব।”