congress
নিজস্ব প্রতিনিধি: বীরভূম, মালদা থেকে মুর্শিদাবাদ, অন্যদিকে জলপাইগুড়ি থেকে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বস্তুত রাহুলের বঙ্গ সফরে এতটা যে সাড়া পড়বে সেটা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ভাবতেও পারেননি। কিন্তু প্রশ্ন হল রাহুলের এই বঙ্গ শহর থেকে শুধু কি জনপ্লাবন-ই প্রাপ্তি বঙ্গ কংগ্রেসের? তা কিন্তু নয়। রাহুলের এই কয়েক দিনের বঙ্গ সফরের মধ্যে অত্যন্ত সুপ্তভাবে কংগ্রেসের কিছুটা প্রাপ্তি লুকিয়ে রয়েছে। যেটা চট করে সাদা চোখে দেখা যাবে না। সেটা হল রাজ্য কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি।
ঘটনা হল গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের যে সমস্ত জেলায় কংগ্রেসের ভাল সংগঠন ছিল তা ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলে থাকাকালীন সেই দায়িত্বের অনেকটাই পালন করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। উত্তর দিনাজপুর, মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে কংগ্রেস জয়লাভ করলেও দল ভাঙিয়ে সেগুলি ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। অভিযোগ ওঠে যে জোর করে, নানা প্রলোভন দেখিয়ে, ভয় ভীতি প্রদর্শন করে কংগ্রেসের জেতা পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের সদস্যদের পাশাপাশি পুরসভার কাউন্সিলর, এমনকী জেলা স্তরের নেতাদের টেনে আনা হয়েছিল তৃণমূলে। স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের শক্তিশালী সংগঠন জেলাগুলিতে ভেঙে যেতে থাকে। তবে গত পঞ্চায়েত ভোটে দেখা গিয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে তৃণমূলের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন কংগ্রেসের কর্মী- সমর্থকরা। এই পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধীর বঙ্গ সফরে দেখা গেল কংগ্রেস তাদের সংগঠন আগের চেয়ে কিছুটা হলেও গুছিয়ে নিতে পেরেছে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সংগঠিত ভাবে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এসে রাহুলের কর্মসূচিতে সামিল করতে পেরেছেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। অর্থাৎ রাহুলের যাত্রায় যে জনপ্লাবন দেখা দিয়েছে সেখানে সাধারণ মানুষের উপস্থিতির পাশাপাশি সংগঠিত ভাবে লোক জড়ো করতে পেরেছিল কংগ্রেস। যেটা গত কয়েক বছর আগে সম্ভব ছিল না। নিঃসন্দেহে এটা কংগ্রেসের বড় প্রাপ্তি। রাহুলের ন্যায় যাত্রা কর্মসূচি বঙ্গে প্রবেশ না করলে সেটা কিন্তু বোঝা যেত না। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে তৃণমূলের।
সেই সঙ্গে আরেকটি বিষয়ে কংগ্রেসের প্রাপ্তি হয়েছে। তা হল রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব যেভাবে তৃণমূলের বিরোধিতা করে চলেছেন তাকে নিঃশব্দে সমর্থন করে গিয়েছেন রাহুল। একদিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি জোটবার্তা দিচ্ছেন রাহুল। অন্যদিকে হুডখোলা জিপে মমতার কড়া সমালোচক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে পাশে নিয়ে একের পর এক জেলা পরিক্রমা করেছেন রাহুল। বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রদেশ নেতৃত্বের অবস্থানের প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। একদিকে মমতা কংগ্রেসকে আক্রমণ করে চলেছেন, পাল্টা মমতাকে নিশানা করছেন অধীর, অন্যদিকে রাহুল জোট বার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু এসবের মধ্যেও নীরবে অধীরকে পাশে নিয়ে ন্যায় যাত্রা কর্মসূচি সফলভাবে করে গিয়েছেন রাহুল। অর্থাৎ সরাসরি কিছু বললাম না, আবার অনেক কিছুই বলে গেলাম। অত্যন্ত সুকৌশলে এই বার্তাই দিয়ে গেলেন রাহুল। যা নিঃসন্দেহে রাজ্য কংগ্রেসের বড় প্রাপ্তি।