পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে একাধিক বার আদালত মুখ পুড়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। শুক্রবার নতুন করে কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। কমিশনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু কেন এমন নির্দেশ? ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হতে আবেদন করেও ৩ দিনে ২০ হাজারেরও বেশি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাহারের কারণ কী? জানতে চেয়ে কমিশনের ব্যাখ্যা চাইল হাই কোর্ট। এবিষয়ে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি উদয় কুমারের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘ক্যানিংয়ে ২৭৪ জন মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। কেন ২০ হাজারের বেশি মনোনয়ন বাতিল বা প্রত্যাহার হল? এছাড়া বহু জায়গায় মনোনয়ন তুলতে হুমকি মারধর সহ নানা ঘটনার মামলা হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে চলছে। সেসব ক্ষেত্রে কমিশন কোনো পদক্ষেপ করেনি। কড়া নজরদারি কমিশনের তরফে দরকার।’
শুধু ক্যানিংয়েই শাসকদলের ২৭৪ জন প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নয় রাজ্যের অন্যত্রও ধরা পড়েছে এক ছবি। রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের সাড়ে ১২ শতাংশ আসনে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের শুক্রবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৬৩,২২৯ আসনের মধ্যে আট হাজারের বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯,৭৩০টি আসনের মধ্যে ৯৯১টি এবং জেলা পরিষদের ৯২৮টির মধ্যে ১৬টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। রাজ্যে ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও আসনে কোনও প্রার্থী নেই। কেন এত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়? এর স্বপক্ষে কোনও কারণ যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানাতে পারেনি। তবে, তাৎপর্যপূর্ণ হল সবচেয়ে বেশি বিনা লড়াইয়ে নির্বাচিত প্রার্থী রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।
- শীর্ষে দক্ষিণ ২৪ পরগনা:
জেলার ৬,৩৮৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ১,৭৬৭টি আসনে মাত্র এক জন করে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। ৯২৬টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনের মধ্যে ২৩৩টি এবং জেলা পরিষদের ৮৫টি আসনের ৮টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর পরেই নাম রয়েছে বীরভূমের। ভোটের আগেই ১০ শতাংশেরও বেশি আসনে শাসক দলের জয় কীভাবে সম্ভব? বিরোধীদের অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে তৃণমূল। রাজ্যের একাধিক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের অঙ্ক যেমন অবাক করেছে সকলকে তেমনই সামনে এসেছে আরও এক নজিরবিহীন কাণ্ড। মক্কায় থেকে মিনাখায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। যে মামলা গিয়েছে হাইকোর্টে…
বসিরহাটের মিনাখাঁর কুমারজোলর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোহরুদ্দিন গাজি। ৪ঠা জুন হজ করতে মক্কায় গিয়েছেন তিনি। গণনা হয়ে যাওয়ার পর ফেরার কথা। তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মামলা হয় হাইকোর্টে। আদালত কমিশনের কাছে জানতে চায়, প্রার্থী যখন হজে গিয়েছেন তখন ভোট ঘোষণা হয়নি। ৯ জুন ভোট ঘোষণার সময়ে তিনি আরবে ছিলেন। তাহলে মনোনয়ন পত্রে সই করল কে? কমিশনের তরফে জানানো হয়, সম্ভবত আগেই প্রার্থী সই করে গিয়েছেন। শুক্রবার মামলার শুনানিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন আদালতের কাছে জানায়, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। সেই মতো কমিশনকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত।