নয়াদিল্লি: কেন্দ্রের নয়া ফরমানে চরম হয়রানির শিকার আমআদমি। নতুন আধার বা আধার আপডেট করার ক্ষেত্রে একাধিক প্রয়োজনীয় নথি স্রেফ বাতিল করে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। জন্ম-তারিখের প্রমাণ হিসেবে আর গ্রাহ্য হবে না ভোটার, প্যান, রেশন কার্ডের মতো পরিচয়পত্রগুলি। বিজ্ঞপ্তি জারি করে নয়া নিয়ম নিয়ে এল ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ইউআইডিএআই।
ব্যাঙ্ক থেকে ডাকঘর, যে কোনও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেই প্যান একটি আবশ্যিক নথি। আবার আধারের সঙ্গে প্যান লিঙ্ক থাকাটাও মাস্ট৷ না হলেই বন্ধ হয়ে যাবে যাবতীয় পরিষেবা। অথচ, সেই আধারেই বয়সের প্রমাণ হিসাবে আর বৈধ নয় এই পরিচয়পত্র! তবে প্যান একা নয়৷ এই তালিকায় জুড়েছে আরও কিছু নথি। তবে উদ্বেগ এখানে নয়৷ কিন্তু, নতুন নির্দেশিকায় যে সব ডকুমেন্টকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তার অধিকাংশই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছে থাকে না। আধার কার্ড হয়তো তাঁরা করে নিয়েছে৷ কিন্তু আধার আপডেট? কেন্দ্রের নয়া নিয়ম অনুযায়ী, ১০ বছর অন্তর অন্তর আধার আপডেট করা বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে কোন পরিচয়পত্র লাগবে? যাঁরা প্যান বা ভোটার কার্ড নিয়ে আধার পরিষেবা কেন্দ্র বা পোস্ট অফিসে আধার কার্ড করাতে বা আপডেট করতে, কিংবা জন্ম তারিখ বদলাতে আসছেন, তাঁদের কিন্তু হয়রান হতে হচ্ছে।
ভোটার বা রেশন কার্ড হাতে যারা আধার কার্ড করার জন্য লাইন দিচ্ছেন, তাঁদের জানানো হচ্ছে এইসব পরিচয়পত্রগুলি আর গ্রহণ করা হবে না। কেন এত গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্রগুলি আর জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র হিসেবে গ্রাহ্য হবে না? তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি আধার কর্তৃপক্ষ। শুধু প্যান-ভোটার বা রেশনই নয়, জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র হিসেবে বাতিল করা হয়েছে স্কুল ছাড়ার সার্টিফিকেট, স্কুল ট্রান্সফার সার্টিফিকেট, কেন্দ্রীয় সরকারি হেল্থ সার্ভিস স্কিমের শংসাপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, কিষান ফটো পাসবুক, প্রতিবন্ধী শংসাপত্র, এসসি, এসটি বা ওবিসি সার্টিফিকেট, ম্যারেজ সার্টিফিকেট, ১০০ দিনের জব কার্ড, লেবার কার্ডও। তাহলে আধারে এখন কোন নথি মান্যতা পাবে? বলা হয়েছে, পাসপোর্ট, সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আইডেন্টিটি কার্ড, পেনশনার কার্ড, স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মার্কশিট বা সার্টিফিকেট প্রভৃতি বৈধ হিসাবে গ্রহণ করা হবে৷
প্রুফ অব আইডেন্টিটি বা পরিচয়পত্রের প্রমাণ সংক্রান্ত নথিতেও রদবদল এনেছে কেন্দ্র। এক্ষেত্রে আধার কর্তৃপক্ষ আগে যেখানে ব্যাঙ্কের পাসবই গ্রহণ করত। এখন আর তা হবে না৷ এছাড়াও আর গ্রহ্য হবে না ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট বা পোস্ট অফিস সেভিংস অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট। গ্রহণ করা হবে না এমপি, এমএলএ, পঞ্চায়েত প্রধান বা পুরসভার কাউন্সিলারের শংসাপত্রও। তলিকা থেকে বাদ পড়েছে বিদ্যুতের বিল, ফোনের বিল, সম্পত্তি করের চালান, গ্যাসের সংযোগের বিল, জীবন বা স্বাস্থ্যবিমা পলিসির নথিও। এক্ষেত্রে অবশ্য প্যান, রেশন,ভোটার কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স গৃহীত হবে৷
এদিকে, প্যান-আধার লিঙ্ক করানোর জন্য আর কিন্তু বেশি সময় নেই। সমস্যায় এড়াতে ৩০ জুনের মধ্যেই অতি অবশ্যই প্যান-আধার লিঙ্ক করে নিন৷ না হলে ১০০০ টাকা জরিমানা গুনতে হবে৷ আয়কর বিভাগ জানাচ্ছে, আয়কর আইন ১৯৬১-র আওতায় সব প্যান কার্ড হোল্ডার যাঁরা ছাড়ের বিভাগে পড়েন না, তাদের আধারের সঙ্গে প্যান লিঙ্ক করাটা বাধ্যতামূলক। যদি প্যান কার্ডের সঙ্গে আধারের লিঙ্ক না থাকে, তাহলে আপনি মিউচুয়াল ফান্ড, ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না।
কিন্তু, প্যান কার্ডের সঙ্গে আধার লিঙ্ক করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে কী কী করবেন?
* আধার করার ক্ষেত্রে সবার আগে দেখে নিন আপনার প্যান এবং আধার কার্ডে যেন নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ- এইসমস্ত তথ্য নির্ভুল থাকে। এগুলোকে বলে ডেমোগ্রাফিক ডিটেলস। দুটো কার্ডেই যেন একই রকমের ডেমোগ্রাফিক ডিটেলস থাকে৷
* প্যান-আধার লিঙ্ক করার আগে অনলাইনে দুটি কার্ডেরই যাবতীয় তথ্য আপডেট করে নিতে হবে। কারণ প্যান কার্ড বা আধার কার্ডে তথ্য আপডেট করা না থাকলে প্যান-আধার লিঙ্ক করা যাবে না।
* প্যান কার্ড আপডেট করার জন্য লগইন করতে হবে www.pan.utiisl.com- এই ওয়েবসাইটে। আর আধার কার্ড আপডেটের জন্য যেতে হবে ইউআইডিএআই- এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে।
* সমস্ত তথ্য আপডেট করার পর প্যান এবং আধার কার্ড লিঙ্ক করে নিন ইনকাম ট্যাক্স অর্থাৎ আয়কর বিভাগের ই-পোর্টালের মাধ্যমে।
* এরপরেও যদি আপনার প্যান-আধার লিঙ্ক না হয়, তাহলে বায়োমেট্রিক অথেনটিফিকেশন করাতে হবে। এক্ষেত্রে ৫০ টাকা চার্জ দিতে হবে৷ যা দিতে হবে প্যান সার্ভিস প্রোভাইডারদের সেন্টারদের।