কলকাতা: ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে অ্যালোপ্যাথি ওষুধের সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ ব্যবহার করা যায়না অ্যান্টিবায়োটিক৷ বিগত কয়েক বছরে রাজ্যে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তের সময় এই সীমাবদ্ধতা সামনে এসেছে৷ তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এবার হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক ওষুধ ব্যবাহার করতে চলেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর ৷ চলতি বছর থেকেই রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকাতে রোগ মোকাবিলায় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর৷একই সঙ্গে মশা দমন করতে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ফর্মুলাও ব্যবাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷দিন কয়েক আগেই স্বাস্থ্য ভবনে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ডেঙ্গু মোকাবিলা ও মশা নিয়ন্ত্রনে কোন কোন হোমিও ও আয়ুর্বেদ ওষুধ ব্যবাহার করা যায় তা নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ওই রিপোর্ট মেলার পরেই তা কিভাবে প্রয়োগ করা হবে তার প্রোটোকল তৈরু করা হবে৷ এপ্রিলের পর থেকে ডেঙ্গু দমনে অ্যালোপ্যাথির পাশাপাশি বিকল্প হাতিয়ার হিসেবে হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদ চিকিত্সা শুরু করা যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে৷
পাশাপাশি এ বছর থেকে রাজ্যজুড়ে মশার লার্ভা নিধনে নিম তেল, করঞ্জ তেলের মতো আয়ুর্বেদিক রসায়ন ব্যবহারের পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর৷ এগুলি ‘বটানিক্যাল ওভিসাইটাল’ নামে পরিচিত৷ শুক্রবার, সাম্প্রতিককালের মধ্যে এই প্রথম ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনায় এব্যাপারে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতামত নেন রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তারা ৷ ওই বৈঠকে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষাকেন্দ্রের নামকরা চিকিৎসক-শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন৷ নিম তেল, করঞ্জ তেল, শিরিষ বীজের মতো আয়ুর্বেদিক ওষধি কীভাবে ডেঙ্গুর মশা এডিস ইজিপ্টাই ও অ্যালবোপিকটাস মারতে কার্যকর, তা ওই প্রতিনিধিরা ব্যাখ্যা করেন ৷
এ সম্ম্পর্কিত কযেকটি কয়েকটি গবেষণাপত্র পেশ করা হয় ৷ তবে ডেঙ্গু দমনে শুধু এ ধরনের প্রিভেনটিভ বা প্রতিরোধী ব্যবস্থাই নয়, রোগ উপশমকারী কিউরেটিভ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও আয়ুর্বেদকে কাজে লাগানোর আর্জি জানান সংশ্লিষ্ট চিকিত্সকেরা৷বৈঠকে স্টেট মেডিসিনাল প্লান্টস বোর্ডের অধিকর্তা ডাঃ প্রশান্ত সরকার, জে বি রায় আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজের ডাঃ অচ্যুত ভট্টাচার্য, ডাঃ পুলককান্তি কর, বিশ্বনাথ আয়ুর্বেদিক মহাবিদ্যালয়ের সুপার ডাঃ দেবাশিস ঘোষ, শ্যামাদাস শাস্ত্রপীঠের কায়াচিকিৎসা বিভাগের প্রধান ডাঃ সুকুমার ঘোষ, কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান আইআইসিবি’র ডাঃ উমেশপ্রসাদ সিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷প্রশান্তবাবু বলেন, অত্যন্ত ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে৷ আশা করছি, শীঘ্রই ডেঙ্গু দমনে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে এই সব ওষুধ ব্যবহার করা হবে৷ ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল হিসেবে ভুঁই আমলকী, গুলঞ্চ, চ্যবনপ্রাশ, প্লেটলেট কাউন্ট কমলে পেঁপে পাতার রস ও মুসাম্বির রসের মিশ্রণ ইত্যাদি দীর্ঘদিন স্বীকৃত ওষুধপত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ আশা করছি, শীঘ্রই মডার্ন মেডিসিনের পাশাপাশি এগুলির ব্যবহারও শুরু হবে৷ তেমনই পরিকল্পনা রয়েছে৷