যনিউ ইয়র্ক: শেষ দফার আলোচনা বানচাল৷ অবশেষে ধর্মঘটের পথে হলিউড। ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত৷ ছবিটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল তখনউ৷ বোঝা যাচ্ছিল স্টুডিয়ো এবং লেখক-অভিনেতাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে কোনও সমঝোতা হচ্ছে না। ইঙ্গিত ছিল রফা না হলে স্ট্রাইক হবে। সেই মতোই শুক্রবার ভোর রাতে আন্দোলনকারী লেখক-অভিনেতাদের যুক্তমঞ্চ একটি কালো ছবি টুইট করে জানিয়ে দিল ধর্মঘটের কথা৷ গত ১১ দিন ধরে নেটফ্লিক্স এবং ডিজনি স্টুডিয়োর বাইরে ধর্নায় বসেছিলেন লেখক চিত্রনাট্যকাররা। সেই আন্দোলনে অভিনেতাদের ইউনিয়ন যোগ দিতেই তা আরও বেগ পেল৷ সেই হরতালের জেরে প্রায় ৬৩ বছর পর ফের উত্তাল হলিউড।
এই ধর্মঘটের ফলে আপাতত থমকে ‘মিশন ইম্পসিবল ডেড রেকনিং পার্ট ২’, ‘অবতার ৩’ওর মতো ছবির শুটিং৷ অসমাপ্ত চিত্রনাট্য শেষ হবে না, ক্ল্যাপস্টিকের শব্দ শোনা যাবে না শুটিং ফ্লোরে৷ লেখক থেকে অভিনেতা, হলিউডের অধিকাংশ কলাকুশলীই হাত তুলে নিলেন শুক্রবার ভোরে৷
মেরিল স্ট্রিপ, জেনিফার লরেন্সের মতো তারকা-সহ ১ লক্ষ ৬০ হাজার শিল্পীর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন দ্য স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড বলেছে, বেতন কমানো ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জেরে কাজের ক্ষেত্রে যে হুমকি তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে তাঁদের দাবির কোনও মীমাংসা হয়নি। কোনও ঐকমত্য ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়েছে।
পারিশ্রমিক বৃদ্ধির পাশাপাশি অভিনেতা-লেখকদের অন্যতম দাবি হল, সিনেমা-সিরিজের কাহিনি এবং চিত্রনাট্যে ‘এআই’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আন্দোলনকারীদের অন্যতম সংগঠন ‘এসএজি-এএফটিআরএ’-এর প্রেসিডেন্ট ফ্রান ডেকার সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘মেশিনের ব্যবহার আমাদের একদিন না একদিন ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করাবে৷ এটাই সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত সত্যের মুখোমুখি হওয়ার। এখন যদি আমরা একজোট না হতে পারি, তবে ভবিষ্যতে আমাদের বিরাট বিপদ আসছে৷’’
হরতালের জেরে হলিউডের বড় স্টুডিয়োগুলি তাদের শুটিং শিডিউল নতুন করে সাজাতে শুরু করেছে। অবিলম্বে অচলাবস্থা না কাটলে বড় ব্যানারের বহু ছবির মুক্তি আটকে যাবে৷ আন্দোলনকারীরাদের হুঁশিয়ারি, ধর্মঘটের প্রভাব শুধু আমেরিকায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, অন্যান্য দেশে হলিউডের শুটিংয়ের উপরও এর প্রভাব পড়বে।
এই ধর্মঘট যখন ঘোষিত হয়, সেই সময় লন্ডনে জোর কদমে চলছিল ‘ওপেনহাইমার ছবির প্রচার। কিন্তু এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে ছবির প্রচার থামিয়ে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান কিলিয়ান মর্ফি, এমিলি ব্লান্টের মতো তারকারা। শুধু বড় পর্দার তারকারাই নন, এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে পথে নেমেছেন ছোট পর্দার অভিনেতারাও। সাম্প্রতিক সময়ের স্ট্রিমিং প্রযুক্তির প্রসার চলচ্চিত্র ব্যবসার কিছু উপকার করেছে ঠিকই, কিন্তু এতে ব্যাহত হচ্ছে চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা ও অন্য কলাকুশলীদের স্বার্থ। চিত্রনাট্যকারদের সংগঠনের অভিযোগ, এই পদ্ধতি বিভিন্ন ভাবে তাঁদের আয়ের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালের পর এই প্রথমবার হলিউডে একযোগে আন্দোলন হচ্ছে৷ ১৯৮০ সালে অভিনেতাদের ইউনিয়ন ধর্মঘট করেছিল৷ সেই আন্দোলন তিন মাস স্থায়ী হয়েছিল৷