নয়াদিল্লি: বিশ্বজোড়া করোনা অতিমারীর কোপ পড়েছে ভারতের অর্থনীতিতেও। লকডাউন ও তার পরবর্তী সময়ে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন বহু মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। এমতাবস্থায় ভ্যাকসিন আসার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা চলছে। আগামী সংসদীয় বাজেট অধিবেশনের দিকে তাই এখন চোখ রয়েছে গোটা দেশের।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আর্থিক বছরের সাধারণ বাজেট পেশ করতে চলেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন। করোনা অতিমারীর আবহে নতুন বাজেট পেশ করার চ্যালেঞ্জ কার্যত ‘অগ্নিপরীক্ষা’ হতে চলেছে অর্থমন্ত্রীর জন্য, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের। শুধু তাই নয়, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে প্রায় ৭.৭% হারে বৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে সরকারি রিপোর্টে। সবমিলিয়ে বাজেট অধিবেশনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত সরকার যে বেশ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন তা বলাই বাহুল্য।
অতিমারী আবহে বাজেট নিয়ে সরকারের উপর চাপ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন। বরং এবারের বাজেটে দেশবাসীর জন্য বেশ কিছু চমক অপেক্ষা করে আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অতিমারী পরিস্থিতির যে ধাক্কা এসে লেগেছিল ভারতীয় অর্থনীতিতে, তা নির্মূল করার বিষয়ে বাজেট নিয়ে আশাবাদী অর্থমন্ত্রী। বাজেট নিয়ে যখন এহেন উত্তেজনায় ফুটছে দেশের রাজনৈতিক মহল, তখন এই ভারতীয় বাজেটের কিছু ইতিহাস জেনে নিলে মন্দ হয় না। সাধারণ ভাবে নতুন বাজেট পেশ করার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনটিকেই ধার্য করা হত। ১ মার্চ থেকে নতুন বাজেটে নতুন অার্থিক বছর শুরু হওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল ভারতে। কিন্তু এই রীতিতে কয়েক বছর আগে বদল আসে। বর্তমানে ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় পেশ করা হয় বাজেট।
শুধু তারিখ নয়, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ভারতে নতুন বাজেট পেশ করার সময়টাও কিন্তু ছিল ভিন্ন। সকালের পরিবর্তে দিনের শেষে বিকেল ৫টা নাগাদ অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করতেন। কেন হঠাৎ প্রচলিত চিরাচরিত রীতিতে বদল এল? বস্তুত, দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিকেল ৫টায় বাজেট পেশ করা হত কারণ ব্রিটিশ শাসনের সময়কালে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের সদস্যরা ভারতের বাজেট শুনতেন। ব্রিটেনের ঘড়ির সময় অনুযায়ী তাই নির্ধারিত হয়েছিল এই সময়। এরপর স্বাধীন ভারতেও বহুদিন পর্যন্ত এই রীতি প্রচলিত ছিল।
১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে এই চিরচারিত নিয়মে বদল আসে। সকাল ১১টায় পেশ করা হয় বাজেট। তারপর থেকেই বাজেটের জন্য ওই সময়টি নির্ধারিত রয়েছে। এরপর প্রয়াত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বাজেট পেজের দিনটিতেও আনেন বদল। ২০১৬ সালে ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করেন তিনি। তারপর থেকে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ভারতে বাজেট পেশ করা হয়ে থাকে।