প্রভাবশালীদে কী কী সুবিধা? SSKM-এ জবাব তলব হাই কোর্টের! কণ্ঠস্বর পরীক্ষায় আপত্তি, ডিভিশন বেঞ্চে কাকু

প্রভাবশালীদে কী কী সুবিধা? SSKM-এ জবাব তলব হাই কোর্টের! কণ্ঠস্বর পরীক্ষায় আপত্তি, ডিভিশন বেঞ্চে কাকু

high court

কলকাতা: অবশেষে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ প্রায় পাঁচ মাস পর বুধবার রাতে এসএসকেএম থেকে বার করে ‘কাকু’কে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷  বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু, কোন অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন কাকু? সেই প্রশ্ন উঠেছে বারবার৷ এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রভাবশালীরা কী কী সুবিধা পাচ্ছেন? এদিন সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ডিরেক্টরের কাছে সেই জবাব চাইলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। 

বুধবার মধ্যরাতে এসএসকেএম থেকে বার করে ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ‘কাকু’কে৷ ৩টে ২০ নাগাদ সেখান থেকে সুজয়কৃষ্ণকে নিয়ে বেরিয়ে আসে ইডি৷ পৌঁছে দেওয়া হয় এসএসকেএম-এ৷ এদিকে, কণ্ঠস্বরের নমুনা জমা দিয়েই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ‘কাকু’। সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যান তিনি৷ আদালতে কাকুর আইনজীবী বলেন, ‘‘সুজয়কৃষ্ণকে এই মামলায় যুক্ত না করেই কণ্ঠস্বর পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা দেওয়া যায় না।’’ কেন ওই নির্দেশ ‘দেওয়া যায় না’, সেই ব্যাখ্যাও তুলে ধরেছেন সুজয়ের আইনজীবী। তাঁর দাবি, বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু মামলাটি বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে চলছে৷ তাই বিচারপতি সিনহা ওই নির্দেশ দিতে পারেন না। কাকুর আইনজীবীর যুক্তির প্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে গিয়ে নির্দেশনামার কপির জন্য আবেদন করতে হবে। কিন্তু বিচারপতি সিনহার এজলাসে গিয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয় কাকুকে৷ বিচারপতি সিনহা জানান, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দেশনামা দেওয়া হবে৷

বেসরকারি হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা করিয়ে জেলে ফেরার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন সুজয়৷ গত ২২ অগাস্ট তাঁকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে৷ চার মাস পরেও হাসপাতাল থেকে জেলে ফেরেননি তিনি। এ ব্যাপারেই আগেই কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল৷ বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলাকারীর আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার এবং সুস্মিতা সাহা দত্তের বক্তব্য, ‘‘কোনও তদন্তে প্রভাবশালীরা গ্রেফতার হলেই এসএসকেএম হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন। হাসপাতাল তাঁদের আশ্রয় কেন্দ্র হয়ে উঠছে। মদন মিত্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও সুজয়কৃষ্ণরা ওখানে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকেন।’’ মামলাকারীর এই বক্তব্য শোনার পরই এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টরের কাছে এ সংক্রান্ত ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করে হাই কোর্ট।

নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র যে ভাবে এসএসকেএম-এ ঘাঁটি বেঁধে রয়েছেন, তা দেখে এদিন রাজ্যের কাছে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, হাসপাতাল কি এখন প্রভাবশালীদের আশ্রয় দিচ্ছেন? বিচারপতি আরও জানতে চান, ‘‘এই মুহূর্তে কত জন প্রভাবশালী ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন? ১০ জন হবে? কেন তাঁদের তিন-চার মাস ধরে হাসপাতালে রাখা হয়েছে?’’ এর পরেই এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি৷  তাঁর সাফ নির্দেশ, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি  প্রভাবশালীরা কী কী সুবিধা পাচ্ছেন? তাঁদের শারীরিক অবস্থা কেমন? এই সব কিছু রিপোর্টে উল্লেখ করতে হবে। একই সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে, এঁদের তুলনায় অন্য রোগীদের কী কী সুবিধা দেওয়া হয়।’’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + two =