যুদ্ধবিমানের চেয়েও উঁচুতে ওড়ে, নজরদারি ছাড়া জানেন কী কী কাজ করে গুপ্তচর বেলুন?

যুদ্ধবিমানের চেয়েও উঁচুতে ওড়ে, নজরদারি ছাড়া জানেন কী কী কাজ করে গুপ্তচর বেলুন?

কলকাতা: আমেরিকার আকাশসীমায় ঢুকে পড়া চিনা বেলুন নিয়ে দানা বেঁধেছিল বিস্তর রহস্য৷ ওয়াশিংটনের দাবি ছিল, আকাশ পথে নজরদারি চালানোর জন্য এই বেলুন পাঠিয়েছে চিন৷ আমেরিকার ‘স্পর্শকাতর’ সামরিক কেন্দ্রগুলির উপর নজরদারি চালাচ্ছে ওই বেলুন৷ চিনা ‘স্পাই’ বেলুনের মধ্যে বিস্ফোরক থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছিল৷ অবশেষে শনিবার সেটিকেগুলি করে নামায় পেন্টাগন৷ 

আরও পড়ুন- কী কারণে বারবার ভূমিকম্প তুরস্কে? নেপথ্যে বড় বিষয়

তবে আমেরিকার অভিযোগ অস্বীকার করে বেজিং-এর পাল্টা হুঁশিয়ারি,আমেরিকা যা করেছে তার ফল ভুগতে হবে। কড়ায়গণ্ডায় চিন এর জবাব দেবে। এই বেলুটি গুপ্তচর বেলুন নয় বলেও দাবি করেছে ড্রাগনের দেশ৷ কিন্তু এই ‘নজরদারি’ বেলুন আসলে কী? কেমন করেই বা কাজ করে সেটি?
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শত্রু দেশের উপর নজর রাখতে আকাশ পথে বেলুন পাঠানোর ব্যবস্থা আজকের নয়। একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দেশ তাদের শত্রুদেশের আকাশে বেলুনকে গুপ্তচর করে পাঠাচ্ছে। শুধু সময়ের সঙ্গে বদলেছে প্রযুক্তিটা৷ 

আমেরিকার গৃহযুদ্ধে প্রথম এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। ১৮৬২ সালের এপ্রিলে ইউনিয়ন পক্ষের জেনারেল ফিৎজ জন পোর্টার বেলুনে সওয়ার হলে শত্রুপক্ষের উপর নজরদারি চালাতে আকাশে পাড়ি দেন। কিন্তু শত্রুরা তাঁর বেলুন দেখেই সেটি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কোনও মতে বেলুন নিয়ে ইউনিয়নের দিকে চলে আসেন জেনারেল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হাইড্রোজেন ভরা বেলুনের ভূমিকা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বেলুনের সব চেয়ে বেশি প্রয়োগ করেছিল আমেরিকাই। তাদের বেলুন দেখলেই গুলি করত শত্রু শিবির।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৫, মূলক এই এক বছর আমেরিকায় প্রায় ন’হাজার বোমা ভরা বেলুন পাঠিয়েছিল জাপান। প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে প্রায় ৯,৬৫৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছিল বেলুনগুলি।

১৯৪৫ সালের মে মাসে ওরেগনে বিস্ফোরক ভরা এই বেলুনের কারণে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল বলেও জানা যায়। ইউরোপে হামলার জন্য আমেরিকাও ব্যবহার করেছিল এহেন বিস্ফোরক বোঝাই বেলুন।

একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে অনেক বেশ আধুনিক হয়েছে নজরদারি বেলুন। কেমন ভাবে তৈরি করা হয় এই বেলুন?

‘স্পাই’ বেলুনে ভরা থাকে হিলিয়াম গ্যাস ও সৌর প্যানেল। এই সৌর প্যানেলই বেলুনকে শক্তি জোগায়। বিমানের থেকেও অনেক বেশি উঁচুতে  উড়তে পারে এই নজরদারি বেলুন। এমনিতে ৮০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়লেও এটি সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে৷ সেখানে যুদ্ধবিমান ওড়ে ৬৫ হাজার ফুট দিয়ে। বাণিজ্যিক বিমান যায় ৪০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে। অর্থাৎ বিমানের চেয়ে অনেক উপর দিয়ে ওড়ে এই নজরদারি বেলুন।

২০০৪ সালে প্রথম হিলিয়াম ভরা বেলুন নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। ইরাকের গৃহযুদ্ধের সময় এই বেলুন দিয়েই নজরদারি চালাত আমেরিকা। আফগানিস্তান যুদ্ধের সময়ও  হিলিয়াম বেলুনকে হাতিয়ার করা হয়েছিল৷ এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বহু আফগান নাগরিক। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এতে তাদের গোপনীয়তা খর্ব হচ্ছে।
 

যারা এতদিন সবচেয়ে বেশি বেলুনের প্রয়োগ করেছে, এ বার সেই আমেরিকার আকাশেই উঁকি দিল চিনা বেলুন। পেন্টাগনের দাবি, এই বেলুনের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে বেজিং। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, বেলুনটি নিয়ে ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে। এর পরেই সেটিকে গুলি করে নামানো হয়৷  এতে অবশ্য বেজায় চটে চিন৷