২০১৮ সালের ভোট হিংসায় ছেলেকে হারিয়েছেন, এখন কেমন আছে সঞ্জিতের পরিবার?

২০১৮ সালের ভোট হিংসায় ছেলেকে হারিয়েছেন, এখন কেমন আছে সঞ্জিতের পরিবার?

ইতিহাসে মাস্টার্স করেছিল ছেলেটা… একদিকে পরিবারের অর্থকষ্ট অন্যদিকে বেকারত্বের জ্বালা কুঁড়ে কুঁড়ে খেত বুকের মধ্যে… চাকরির আশায়  তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন তাঁতি পরিবারের ছেলে সঞ্জিত প্রামানিক। স্থানীয় নেতৃত্বের কাছের লোক হয়ে উঠেছিল শান্তিপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যুবক। কিন্তু, সেই সম্পর্কই একদিন ডেকে আনে বিপদ। ২০১৮ র পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বুধ দখল করতে গিয়ে মৃত্যু হয় সঞ্জিতের। তারপর থেকে ছেলের ছবি বুকে আঁকড়ে দিন কাটাচ্ছেন সন্তানহারা বাবা-মা।

তাঁত বুনে সংসার চলত… স্বল্প সেই উপার্জনের মধ্যেই ছেলেকে স্নাতকোত্তর পড়িয়েছিলেন রঞ্জিত প্রামাণিক। স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষিত ছেলে একদিন পরিবারের হাল ধরবে। অনটনের সংসারে স্বস্তি ফিরবে… কিন্তু, কোথায় কী! পঞ্চায়েত ভোট হিংসায় প্রাণ হারিয়েছে একমাত্র সন্তান। তারপর থেকে কোনওরকমে আধপেটা খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

২০১৮, পঞ্চায়েত নির্বাচন। দলের উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে পঞ্চায়েত বিরোধী মুক্ত করতে ময়দানে নেমেছিল নিচুতলার কর্মীরা। একের পর এক বুথে ব্যালট বাক্স চুরি, অবাধে ছাপ্পার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি বুথ। শহরের মানুষ কেন গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রবেশ করবে? প্রশ্ন তুলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আদিবাসি অধ্যুষিত গ্রাম। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা ভোট লুট করতে গেলেই পাল্টা প্রতিরোধ করে গ্রামবাসীরা। চারিদিক থেকে তীর ধনুক দিয়ে আক্রমণ চালায়। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে ছিলেন সঞ্জিতও। শান্তিপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

তারপর থেকে কেটে গিয়েছে পাঁচ পাঁচটা বছর… আরও একটা পঞ্চায়েত ভোট এসে হাজির দুয়ারে। কিন্তু এই পাঁচ বছরে সনজিৎের কথা মনে পড়েনি শাসক দলের… জীবন দিয়েছে ছেলে কিন্তু কেউ মনে রাখে নি। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে চোখের জল ফেলছেন হতভাগ্য মা। একটাই আফসোস, যদি ছেলেকে সেদিন আটকাতে পারতেন, আজ এই দিনটা দেখতে হত না। কোনও আশ্বাস, সহায়তা নয়, নেতৃত্বের কাছে একটাই প্রশ্ন সন্তানহারা মায়ের।

ছেলের মৃত্যুর পর দু-একজন তৃণমূল নেতা মাস দুয়েক এসে আশ্বাস দিয়ে গেলেও কাজের কাজ হয়নি। এরপর মাস পেরিয়ে বছর কেটেছে, কিন্তু আর নেতাদের দেখা নেই। যদিও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন শান্তিপুর পৌরসভার তৃণমূলের পৌরপিতা সুব্রত ঘোষ। ২০১৮ সালের হিংসার ঘটনা উল্লেখ করে শাসক দলকে নিশানা করেছে গেরুয়া শিবির। শান্তিপুর বিধানসভার বিজেপি কনভেনার সুব্রত করের অভিযোগ, তৃণমূল কখনও অসহায় পরিবারের পাশে থাকে না।

দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে অর্থনৈতিক হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন সঞ্জিত। আর সেই চেষ্টা তাঁকে টেনে নিয়ে গেছে নেতাদের কাছে। সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী না হলেও একটা চাকরির আশায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা শুরু করেছিলেন। শান্তিপুরের তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের অনুগামী হয়ে উঠেছিলেন। সেই সম্পর্কই বিপদ ডেকে আনল জীবনে… 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *