‘অযোগ্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষার ভার!’ সুবীরেশের জামিন খারিজ করে মন্তব্য হাইকোর্টের

‘অযোগ্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষার ভার!’ সুবীরেশের জামিন খারিজ করে মন্তব্য হাইকোর্টের

high-court-ssc-case-hearing-commission-faces-question

কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের জামিনের আবেদন আরও একবার খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্টে। তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ৷ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। অযোগ্যদের চাকরি দিয়ে, যোগ্যদের শুধু বঞ্চিত করাই হয়নি৷ অযোগ্যদের হাতে আগামী প্রজন্মের শিক্ষার ভার তুলে দেওয়া হয়েছে৷ আগামী প্রজন্মকে অনিশ্চিতয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া চরম প্রতারণা,’ মন্তব্য কলকাতা হাই কোর্টের৷ 

আরও পড়ুন- পুরি-সব্জি দিয়ে প্রাতরাশ, রাতে বেগুনপোড়া, থানার খাটে ‘নিশ্চিন্তে’ ঘুম কেষ্টর

এই মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষেণ,  যেখানে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে,  সেখানে  সংস্থার সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তি এত সহজে দায় এড়াতে পারেন না। এ ব্যাপারে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এটা কোনও পোস্ট মাস্টারের চাকরি নয়। মনে রাখবেন এখানে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। সেখানেও যদি দুর্নীতি হয়, তবে এটা তো সমাজের সঙ্গে বেইমানি করা হল।’’ কড়া মনোভাব নিয়েই এদিন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ জানায়, ‘‘একজন পাবলিক সার্ভেন্ট এর উচিত তার কর্তব্য পালন করা। এই স্ক্যামে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা ১বছর পরে জামিনের কথা ভাববো…৷’ 

বুধবার হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে ছিল সুবীরেশ ভট্টাচার্যের জামিনের মামলার শুনানি৷ এদি সুবীরেশের আইনজীবী আদলতকে জানান, তাঁর মক্কেল যখন এসএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই সময় নিয়োগ দুর্নীতি হয়নি। এর পর তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হন৷ আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পরই বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘তিনি তো আর ভারতের রাষ্ট্রপতির ভাইস চ্যান্সেলর নন। অতএব, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নয়। আমরা জানতে চাই, দুর্নীতিতে সুবীরেশের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে।’’

এর পর সুবীরেশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে তাঁর আইনজীবী আদালতকে জানান, ‘‘উনি পদে থাকাকালীন এই সব ঘটনা ঘটেনি। ২১ অক্টোবরের চার্জশিট অনুযায়ী, আমার মক্কেলের মৌখিক নির্দেশেই প্রোগ্রামিং অফিসার ওএমআর শিট পরিবর্তন করেছেন। কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে। এমনকি, এসএসসির ওয়েবসাইটেও নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে। অথচ এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য তৈরি উপদেষ্টা কমিটির মাথায় ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিনহা। আমার মক্কেলকে প্রথমে সাক্ষী হিসাবে ডাকা হয়েছিল। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।’’

এর পরেই বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘উনি একটি সংস্থার সর্বোচ্চ পদে ছিলেন। সেই জায়গায় কী ভাবে আপনাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এড়িয়ে যেতে পারেন? যিনিই অভিযোগ আনুক, আপনি এত দিন কেন সচেতন হননি?’’ বিচারপতির ভর্ৎসনা, ‘‘সংস্থার প্রতিনিধি হিসাবে আপনার দায়িত্ব রয়েছে। এটা কোনও পোস্ট মাস্টারের চাকরি নয়।’’ 
 

এদিকে, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সিবিআই-এর হাতে৷ তদন্তকারীদের দাবি, নম্বরে গড়মিল করে নিজের ভাগ্নেকেও চাকরি করিয়ে দিয়েছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য। কীভাবে চাকরি পেয়েছিলেন সুবীরেশের ভাগ্নে, সেই তথ্য জানতেই এদিন নিজাম প্যালেসে তলব করা হয় সুবীরেশের ভাগ্নেকে।