মুম্বইয়ের ধারাভি… পলিথিন খাটানো এই এক টুকরো জায়গা থেকেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেছিল মেয়েটা। সেই মেয়েই আজ বিলাসবহুল বিউটি ব্র্যান্ড ‘ফরেস্ট এসেনশিয়ালস’-এর প্রচার মুখ। বস্তির মেয়ে মালিশার মডেল হয়ে ওঠা আরও একটা স্লামডগ মিলিওনেয়ারের গল্প বলে।
ছোটবেলা থেকেই মালিশার স্বপ্ন ছিল মডেল হওয়ার। কিন্তু, বস্তিতে থেকে সেই স্বপ্ন দেখা, হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। যদিও মাত্র ১৪ বছর বয়সেই নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে পা রেখেছে বস্তির এই রাজকুমারি। ‘স্লাম প্রিন্সেস’ হ্যাঁ স্থানীয়দের কাছে মালিশা খারওয়া এই নামেই পরিচিত। এখন অবশ্য তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে…
বর্তমানে ‘ফরেস্ট এসেনশিয়ালস’-এর নতুন প্রচার অভিযান ‘দ্য যুবতী কালেকশন’-এর মুখ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মালিশাকে। মুম্বই -সহ দেশের বিভিন্ন শহরে তাঁর ছবি দিয়ে নিজেদের প্রোডাক্টকে তুলে ধরছে ওই প্রসাধনী সংস্থা। ঝাঁ চকচকে স্টোরে নিজের সেই ছবি দেখে চোখে জল মালিশারও…
ইতিমধ্যেই একটি ভিডিও শুট করেছে সংস্থাটি। তাতে দেখা যাচ্ছে প্রসাধনীর দোকানে হেঁটে ঢুকছে মালিশা। চারিদিকে নিজের ছবি দেখে চোখে মুখে তার আনন্দ, উচ্ছাস… একটা সময় কেঁদেও ফেলেন। মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তি থেকে প্রচার মুখ হয়ে ওঠা, নেপথ্যের সেই কষ্টের কথা মনে করেই হয়তো এই জল দু-চোখে।
ধারাভির ৩ পাশ খোলা তাঁবুতে বসে খুব সহজে সাগর দেখা গেলেও লাইম লাইটে আসার পথটা কিন্তু একদমই মসৃণ ছিল না…বাবা আর ভাইকে নিয়ে ৩ জনের পরিবার মালিশার। বস্তির বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, বাবাকে সংসারের কাজে সাহায্য করতে করতেই বেড়ে উঠছিল সে। কিন্তু, ২০২০ সালের একটা দিন আচমকাই, মালীশার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়…
বছর তিনেক আগে বস্তিতে বেড়ে ওঠা এই প্রতিভাকে খুঁজে বের করেছিলেন হলিউড অভিনেতা ও পরিচালক রবার্ট হফম্যান। ১৪ বছরের তরুণীর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘গো ফান্ড মি’ নামে একটি পেজ তৈরি করে দিয়েছিলেন রবার্ট। বর্তমানে সেই পেজে মালীশার ফলোয়ারের সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলোয়াররা যে পোস্টগুলি করেন, তাতে হ্যাশট্যাগ দেওয়া থাকে ‘প্রিন্সেস ফর্ম স্লাম’। গত কয়েক বছরে একাধিক মডেলিংয়ের পাশাপাশি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিও করেছেন মালিশা। এইভাবেই স্বপ্নের পথে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে সে।
ভবিষ্যতে সুপারমডেল হতে চাওয়া মালিশার অনুপ্রেরণা অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তবে মডেলিং করা স্বপ্ন হলেও, শিক্ষাকেই অগ্রাধিকার দিতে চায় এই কিশোরী। ইচ্ছে আর মনের জোর থাকলে ‘স্বপ্নও যে সত্যি হয়’ মালীশার কাহিনি যেন সেটাই মনে করিয়ে দেয়।