নয়াদিল্লি: উত্তরাখণ্ডের গঢ়ওয়াল হিমালয়ের ‘দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২’ শিখরের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা৷ সেই সময় আচমকা তুষারধস নামে৷ এই ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত চার জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরাখণ্ডের এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী সবিতা কাঁসওয়াল।
আরও পড়ুন- শান্তিপূর্ণ জায়গা হবে কাশ্মীর, পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিলেন শাহ
বছর ২৬-এর সবিতা ছিলেন উত্তরকাশীর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণকেন্দ্র ‘নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং’ (নিম)-এর প্রশিক্ষক৷ সবিতা ছাড়াও মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও এক মহিলা প্রশিক্ষক নাউমি। চলতি বছরের মে মাসে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে আট হাজার উচ্চতার দুই পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছিলেন সবিতা। ১২ মে বিশ্বের উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ, এভারেস্ট জয় করেছিলেন তিনি৷ যার উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার৷ ওই মাসেরই ২৮ তারিখ ৮,৪৬৩ মিটারের মাকালু জয় করে রেকর্ড করেন এই পর্বতারোহী।
দুই আট হাজারি শৃঙ্গ জয়ের পর ‘নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং’ (নিম)-এ স্থায়ী ভাবে প্রশিক্ষকের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের লোনথ্রু গ্রামের বাসিন্দা সবিতা। এই ইনস্টিটিউট থেকেই ২০১৩ সালে পর্বতারোহণের ‘বেসিক’ এবং ‘অ্যাডভান্স’ কোর্স করেছিলেন পাহাড়ি কন্যা। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ওই সংস্থায় প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এবার সবিতা বেরিয়েছিলেন গঢ়ওয়াল হিমালয়ের ‘দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২’ শৃঙ্গ জয়ে৷ এর শৃঙ্গের উচ্চতা ৫,৬৭০ মিটার। তবে এই অঞ্চলটি দুর্ঘটনাপ্রবণ বলেও পরিচিত৷ পর্বতারোহণ বিশেষজ্ঞদের অনুমান, পাহাড়ের ঢালে জমে থাকা তুষারের স্তূপ আচমকা ধসে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে সবিতাদের।
সবিতা ভারতের দ্বিতীয় এভারেস্ট জয়ী মহিলা পর্বতারোহী যিনি হিমালয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন। ২০১৪ সালের মে মাসে কাঞ্চনজঙ্ঘা জয়ের পরে ইয়াংপুং কাং শৃঙ্গে ওঠার সময় মৃত্যু হয়েছিল বাংলার ছন্দা গায়েনের।
সবিতার মতোই এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন বাংলার ছন্দা। ২০১৩ সালে এভারেস্ট জয়ের পর একই অভিযানে লোৎসে শৃঙ্গেও আরোহণ করেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের মে মাসে ইয়াংলুং কাং অভিযান যান বাংলার এই পর্বতারোহী৷ সেখানেই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়েন এবং পাহাড়েই হারিয়ে যান এভারেস্টজয়ী ছন্দা। তাঁর দেহ আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি৷
‘দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২’ অভিযানে বেরিয়েছিলেন মোট ৪১ জনের একটি দল৷ তাতে সামিল ছিলেন এভারেস্টজয়ী সবিতা ও নাউমি-সহ মোট ন’জন প্রশিক্ষক। ওই দলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন বাংলার তিন জন পর্বতারোহী। এই তিন বাঙালি শিক্ষার্থী সহ মোট ২৫ জন এখনও নিখোঁজ বলে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন সূত্রে খবর। উদ্ধার করা হয়েছে সবিতা-সহ চার জনের দেহ।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই সেনা, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল (এনডিআরএফ)-এর উদ্ধারকারী বাহিনী অকুস্থলে পৌঁছে উদ্ধার করা শুরু করে৷ মোট ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বায়ুসেনার কপ্টারে তাঁদের দেহরাদুন নিয়ে আসা হয়েছে৷ বুধবার উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা আরও ছ’টি দেহ দেখতে পেয়েছেন বলে সূত্রের খবর৷ কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্গমতা এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সেই দেহগুলি এখনও উদ্ধার করা যায়নি৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>