বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় সরকারের আনা কৃষি আইন খারিজ করার দাবিতে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করল ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন। মামলার আবেদনে সংগঠনের সভাপতি ভানুপ্রতাপ সিং দাবি করেন, এই আইনের মাধ্যমে কর্পোরেট সংস্থাগুলির দাক্ষিণ্যের মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে এবং তার বাণিজ্যকিকরণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিল্লি সীমানায় বিক্ষোভরত কৃষকরা এবার “রেল রোকো”র ডাক দিয়েছেন, যা খুব দ্রুতই কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। কোনও আলোচনা ছাড়াই এই আইন খেয়ালখুশি মতো পাস করানো হয়েছে অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনরত কৃষকরা। সেপ্টেম্বরে বাদল অধিবেশনে পাস করানো হয় কৃষি সংক্রান্ত তিনটি বিল। এই বিলকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে নোটিশ পাঠিয়েছে শীর্ষ আদালত।
তবে এসবের মধ্যে শুক্রকবারও কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর জানিয়েছেন, আলোচনার জন্য প্রস্তুত সরকার। একইসঙ্গে কৃষকদের “সাধারণ মানুষের স্বার্থে” আন্দোলন থামিয়ে আলোচনার পথে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কৃষি বিলের কয়েকটি সংশোধনী খসড়়াও পাঠানো হয়েছে কৃষকদের কাছে, যদিও তার কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি বলেও এদিন জানিয়েছে নরেন্দ্র সিং তোমর। তাঁর কথায়, “তাঁদের বিক্ষোভ প্রত্যাহার করা উচিৎ এবং আলোচনার পথে আসা উচিৎ”। কৃষকদের তরফে, কেন্দ্রের পাঠানো প্রস্তাবের উত্তর না আসা নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয়, একটা সমাধান বের করা হবে। আমি আশাবাদী। আমি কৃষক ইউনিয়কে বলব আন্দোলন প্রত্যাহার করতে। সরকার তাদের একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। যদি আইনের কোনও অংশ নিয়ে আপত্তি থাকে, তাহলে তা নিয়ে আলোচনা হবে।”
তিনি বলেন, কেন্দ্রের কোনও ‘ইগো নেই’ এবং খোলা মনে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত সরকার। তাঁর দাবি, আলোচনা যখন চলছে, সেই সময় আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া “ঠিক নয়”। বৃহস্পতিবারও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কৃষকদের আন্দোলন, বিক্ষোভের রাস্তা থেকে সরে এসে , আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে, কৃষকদের সংগঠন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আইন প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন জারি থাকবে। আন্দোলনে যোগ দেওয়া ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা বুটা সিং বলেন, “আমরা এই তিনটে আইনের বিরুদ্ধে। যদি প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা না শোনেন, তাহলে আমরা রেলপথ অবরোধ করব।” বিক্ষোভরত কৃষকদের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১৪ ডিসেম্বর বিজেপির নেতা, মন্ত্রীদের বাড়ি, অফিস ঘেরাও করা হবে, এবং দেশজুড়ে জেলাসদর দফতরগুলিতে বিক্ষোভ ও ধরনা কর্মসূচী পালন করা হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বুধবার পাঠানো ২০ পাতার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পাঠানো প্রস্তাবগুলিকে তারা অস্পষ্ট বলে মন্তব্য করেছে। বুধবার পাঠানো প্রস্তাবে, কৃষকদের এমএসপি বা নূন্যতম বিক্রয়মূল্য নিয়ে লিখিত আশ্বাসের কথা বলা হয়। এছাড়াও মাণ্ডির বাইরে ফসল বিক্রির ক্ষেত্রেও তা থাকবে বলে উল্লেখ করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো প্রস্তাবে। যদিও সেসব মানতে নারাজ কৃষক সংগঠনগুলি। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে অনড় তারা।