নয়াদিল্লি: নতুন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে দিল্লির যন্তর মন্তর এবং সিংঘু সীমানায় চলছে কৃষক আন্দোলন। কৃষিবিল বাতিলের দাবিতে আগেই জানিয়েছিলেন প্রতিবাদ৷ আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে ঘর ছেড়ে রাজধানীর সীমান্তে দেড় মাস ধরে অবস্থানে রয়েছেন তাঁরা৷ শুধুমাত্র পুরুষই নন, মহিলা এবং শিশুরাও শীতের মধ্যে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন৷ কিন্তু ফসলের বীজ বপন করা ছাড়াও শিক্ষার বীজ বপন করে এই আন্দোলনে সিংঘু বর্ডারে এক নতুন নজির গড়লেন কৃষকরা৷
সপ্তাহ তিনেক আগে প্রতিবাদ আন্দোলনে জড়ো হওয়া কৃষক পরিবারের শিশুদের একজায়গায় জড়ো করে পড়াশুনো শুরু করান প্রতিবাদী কিছু কৃষক। কিন্তু তারা খেয়াল করেন, দীর্ঘ দেড় মাসে আশেপাশের স্থানীয় কিছু শিশুও কিছু না বুঝেই প্রতিবাদ স্থলে জড়ো হচ্ছিল। কখনও তারা কাগজ বা প্লাস্টিক সংগ্রহ করত, কখনও বা বড়দের নকল করে স্লোগান দিত, কিন্তু তাদের কোনও পড়াশুনোর সুযোগ বা অভ্যাস কিছুই নেই। তাঁরা ঠিক করেন, সেই সব শিশুদেরও পড়ানো শুরু করা হবে। প্রথমে মাত্র ১২ জনকে নিয়ে শুরু করা অস্থায়ী পাঠশালার ছাত্র সংখ্যা আজ প্রায় ৯০। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত চলছে ক্লাস।
অবশ্য এই অস্থায়ী পাঠশালা তৈরির নেপথ্যেও রয়েছে এক গল্প। কেরালার বছর উনিশের মহম্মদ নিশান তার তিন বন্ধুর সঙ্গে শ্রীনগরে ঘুরতে যাওয়ার জন্য দিল্লিতে এসে নামেন। কিন্তু সেখানে প্রতিবাদী কৃষকদের দেখে তাঁরা ঠিক করেন আন্দোলন স্থলে থেকে গিয়েই শিক্ষা প্রসারের কাজ চালিয়ে যাবেন। এই পাঠশালায় এসে যোগ দিয়েছেন অমৃতসরের আরেক বাসিন্দা কানওয়ালজিত কাউর, যিনি এসেছিলেন কৃষকদের আন্দোলনে যোগ দিতে। তবে এই পাঠশালা চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে নিশানদের। নিশানরা ভালো হিন্দি বলতে পারেন না৷ আবার শিশুরাও ইংরাজি বোঝে না। তবে ভাষা যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, তা পাঠশালার ছবি দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায়। শিক্ষকরা কখনও আধভাঙা হিন্দি তো কখনও হাত নেড়ে, ইশারায় বুঝিয়ে চলেছেন ছাত্রছাত্রীদের। হাতে ছড়ি নিয়ে ক্লাস করার বদলে মাঠের মধ্যে শিক্ষকদের সঙ্গে বসে এমন ক্লাস দারুন উপভোগ করছে বাচ্চারা।
শুধুমাত্র পড়ানোই নয়, নিয়মিত আঁকার ক্লাসও চলছে। যে সব শিশুরা কিছুদিন আগেও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত, কাগজ কুড়িয়ে কিংবা আবর্জনা সাফ করে দিন কাটাত, তাদের হাতেই এখন খাতা-পেন, রং-তুলি। কৃষিবিল বাতিলের দাবিতে অনড় কৃষকরা। অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাদের এই অবস্থান বিক্ষোভ চলবে। এই কৃষক আন্দোলনের এক অন্য অভিমুখ এই অস্থায়ী পাঠশালা। যতদিন এই আন্দোলন চলবে, ততদিন চলবে এই আস্থায়ী পাঠশালা। কিন্তু নিশানদের মতো যুবক এবং অন্যান্য প্রতিবাদী কৃষকদের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা বাচ্চাগুলো যারা সরকারি স্কুল কলেজে ভর্তি হতে পারেনা টাকা অথবা নথির জন্য, এই আন্দোলোন শেষ হলে তাদের কী হবে এই নিয়েও সরকারের অপদার্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই কৃষক আন্দোলন।