মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি সামলেও আদ্যন্ত সাদামাটা জীবন, বই আর ছবি ঘেরা একফালি ঘরেই দিনযাপন বুদ্ধদেবের

মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি সামলেও আদ্যন্ত সাদামাটা জীবন, বই আর ছবি ঘেরা একফালি ঘরেই দিনযাপন বুদ্ধদেবের

কলকাতা: শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার ফের হাসপাতালে ভর্তি হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তবে স্বস্তি একটাই, তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল৷ তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতেই রাজ্য রাজনীতিতে ধরা পড়ল ব্যতিক্রমী ছবি৷ নীতি আদর্শ ভিন্ন হলেও, তাঁর অসুস্থতায় উদ্বেগে গোটা রাজনৈতিক মহল৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে গিয়ে হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন৷ গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও৷ আর এই আবহে বারবার উঠে আসছে তাঁর সাদামাটা জীবনের কথা৷ মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ও তার পরবর্তী সময়ে তাঁর জীবন থেকেছে একেবারেই সাধারণভাবে৷ ৫৯,এ পাম অ্যাভেনিউয়ে একেবারে সাধারণ একচিলতে ফ্ল্যাটেই বুদ্ধদেববাবুর দিনযাপন৷ দরজার বাইরে এখনও লাগানো পুরনো দিনের লেটারবক্স৷ সময় এগিয়ে চললেও তাতে সাঁটা রয়েছে পুরনো কাগজ৷ যখন মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি সামলাচ্ছিলেন বুদ্ধবাবু, ঠিক সেই সময়কার৷ 

মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই পাম অ্যাভেনিউয়ের এই দু’কামরার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বুদ্ধদেববাবু ও তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য৷ বুদ্ধদেববাবুর ঘরে ঢুকলে দেখা যাবে দেওয়াল জুড়ে কালমার্কস, লেলিন থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছবি৷ সুকান্ত ভাট্টাচার্য সম্পর্কে বুদ্ধদেববাবুর কাকাও৷ বই আর ছবিতে ঠাসা ছোট্ট একফালি ঘর তাঁর৷ তবে নিজে এখন আর বই বা কাগজ পড়তে পারেন না বর্ষীয়ান এই বাম নেতা৷ স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য জানালেন, বই বা খবরের কাগজ পড়ে শোনাতে হয় তাঁকে৷ টিভি চললে শব্দ শোনেন৷ দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়েছে তাঁর৷ নিজের হাতেও সব সময় খেতে পারেন না আর৷ শারীরিক অসুস্থতার কারণে বর্তমান রাজ্য রাজনীতি নিয়েও আগ্রহ কমেছে বুদ্ধদেববাবুর৷ 

একসময় সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি ছিল তাঁর সবচেয়ে পছন্দের৷ তাঁকে এই পোশাকে দেখতেই অভ্যস্ত ছিল রাজ্যবাসী৷ আর সেই ধুতি পাঞ্জাবি নিজের হাতে কেচে পরিষ্কার করে দিতেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য৷ তবে এখন আর ধুতি পরার ক্ষমতা নেই৷ বয়সের ভারে ন্যূব্জ হয়েছে শরীর৷ দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শয্যাশায়ী৷ 

বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের গুচ্ছগুচ্ছ টাকা, প্রচুর গয়না, দামী গাড়ি যখন সংবাদ শিরোনামে, তখন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ি আমাদের অবাক করে৷ জানা যায়, এক সময় জ্যোতি বসুও নাকি তাঁকে এই ছোট্ট ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র যেতে বলেছিলেন৷ কিন্তু রাজি হননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ এই ছোট্ট দুনিয়াতেই উনি অভ্যস্ত ছিলেন৷ কোনও দিন রাজপ্রাসাদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেননি তাঁর স্ত্রী মীরাদেবীও৷ নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন স্বামীর দুনিয়ায়৷ স্বামীর ইচ্ছাকেই আপন করে নিয়েছেন৷ যেখানে রয়েছে মোনালিসা, পিকাসো, বুদ্ধদেব গুহর আঁকা ছবি আর থরে থরে সাজানো বই৷ লালা স্যাঁতসেঁতে মেঝের সেই ঘরে সযত্নে রাখা রয়েছে বাবা-মায়ের ছবিও৷ 

২০১১ সালে সিপিএম ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ এর পর পাম অ্যাভেনিউয়ের বাড়ি থেকেই ভোট দিতে যেতেন তিনি৷ ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল বিধানসভা নির্বাচনে শেষবার সেই ছবি দেখা গিয়েছিল৷ এখন আর ভোট দিতে যেতে পারেন না৷ তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুন, এটাই সকলের প্রার্থনা৷ 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 5 =