দেবনীল সাহা, কলকাতা: গত ১৫ বছরে এই প্রথম শোভনহীন নির্বাচন দেখবে বেহালার মানুষ। এক সময়ে যাকে ছাড়া গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজনীতি ভাবাই যেত না, আজ সেই শোভন চট্টোপাধ্যায়কেই নির্বাচনী মঞ্চে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র আজ গোলপার্কের ফ্ল্যাটে একা বসে টিভির পর্দায় পর্যবেক্ষণ করবেন বেহালা পূর্বের রাজনৈতিক যুযুধান। একেই বলে অদৃষ্ট।
ছাত্র রাজনীতি করে নিজের রাজনৈতিক জীবনে হাত পাকিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ১৯৮৫ সাল থেকে কংগ্রেসের হয়ে কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। সেই সময় খুব শীঘ্রই বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে আসেন। হয়ে ওঠেন মমতার প্রিয় ‘কানন’। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরির মূল কারিগরদের মধ্যে তিনিও ছিলেন অন্যতম। ২০০৬ সালে প্রথমবার নির্বাচনী মহারণে নামেন শোভন। সেবার বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে একটুর জন্য সিপিআইএম প্রার্থী কুমকুম চক্রবর্তীর কাছে হার মানেন তিনি। ২০১১ সালে সেই বেহালা পূর্ব কেন্দ্রেই তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে কুমকুম চক্রবর্তীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে প্রথমবার বিধানসভায় আসেন।
২০১০ সালে কলকাতার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ২০১৬ সালে ফের একবার বেহালা পূর্ব থেকে বিপুল ভোটে জিতে বিধানসভায় নিজের কুর্সি সুরক্ষিত রাখেন। কিন্তু ২০১৮ সালের শেষ থেকেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে শোভনের। ২০১৯-এ অবশেষে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নিজের পছন্দের বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে স্ত্রী রত্না চ্যাটার্জির বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিলেন প্রাক্তন মহানাগরিক। কিন্তু তার জায়গায় অভিনেত্রী পায়েল সরকারকে বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে প্রার্থী করে বিজেপি। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে বিজেপির সঙ্গেও সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন মমতার প্রিয় ‘কানন’।
তিন দশকে এই প্রথম শোভনহীন নির্বাচন বাংলায়। এক সময় তার দাপটে গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বেহালাকে নিজের দুর্গ বানিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক। সেই শোভনই এবারের নির্বাচনে ব্রাত্য। গোলপার্কের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে নিঃসঙ্গভাবে বেহালার নির্বাচন যুদ্ধ দেখবেন সংবাদমাধ্যমের পর্দায়। এটাই কি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি? উত্তর দেবে সময়।