এগরাঃ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টা। এখনও থমথমে চারিদিক, কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে স্বজনহারানোর কান্নার আওয়াজ… বুকের মধ্যে দলা পাকাচ্ছে ক্ষোভ। ফুঁসছে পূর্ব মেদিনীপুরের খাদিকুল।
বুধবার তৃণমূলের প্রতিনিধিদল গ্রামে পৌঁছতেই তেড়েফুঁড়ে ওঠে গ্রামবাসীরা। স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েন মানস ভূঁইয়া, দোলা সেন, সৌমেন মহাপাত্ররা। তৃণমূলের ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল খাদিকুল পৌঁছতেই চোর চোর স্লোগান দিতে থাকে গ্রামবাসীরা। মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, ঘটনার পর কয়েকঘন্টা কেটে গেল, এতক্ষণ কোথায় ছিলেন আপনারা? পরিস্থিতি অশান্ত হতেই ‘কর্মসূচি’ বাতিল করে ফিরে যেতে হয় তৃণমূলের প্রতিনিধিদের।
অথচ কয়েক ঘণ্টা আগেই এমন ছিলনা পরিস্থিতি। বুধবার সকালে গ্রামে গিয়ে মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি করেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় একাধিক গ্রামবাসীর মৃত্যুর জন্য রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফারও দাবি করেন বিরোধী দলনেতা।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একেবারে উল্টো চিএ দেখা গেল খাদিকুলে। শুভেন্দু গ্রাম ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই খাদিকুলে যান রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুইয়াঁ, সাংসদ দোলা সেন, মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী সহ তৃণমূলের ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল। গ্রামে তৃণমূল নেতাদের দেখা মাত্রই চোর চোর স্লোগান দিতে থাকে স্থানীয়রা। কোনোমতে একটি বাড়িতে ঢুকে নিহত ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন মানস ভুইয়াঁ এবং দোলা সেন। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি কার মদতে ওই বাজি কারখানা চলছিল, সেখানে পুলিশ এবং স্থানীয় পঞ্চায়েতের ভূমিকা কী ছিল, সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে বলেও আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
একটানা বিক্ষোভ, স্লোগানের জেরে এদিন গ্রামে বেশি দূর এগোতে পারেনি শাসক দলের প্রতিনিধি দল। ‘কর্মসূচি’ অসম্পূর্ণ রেখেই তাঁদের ফিরে যেতে হয়। ক্ষুব্ধ মানস ভুইয়াঁ বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে এসেছিলাম। কিন্তু কয়েকজন অশান্তি পাকানোর ছক কষছিল। আমরা কোনও প্ররোচনায় পা দিইনি। নিহত এবং আহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা ফিরে যাচ্ছি।’’
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ, আচমকাই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এগরা ১ ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রাম। বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরনে একাধিক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। এরা সকলেই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত বলে খবর। বিস্ফোরণকাণ্ডের পর থেকে পলাতক বাজি কারখানার মালিক কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু।
গ্রামবাসীদের দাবি, অভিযুক্ত ভানু তৃণমূলের কর্মী। রাজনৈতিক প্রভাব, পরিচয়ের খাতিরেই ভানুর কারবারের বিষয়ে সব জেনেও পুলিশ নীরব ছিল বলে অভিযোগ। ‘এত গুলো প্রাণ’ চলে যাওয়ার জন্য পুলিশের গাফিলতিকেই দায়ি করেছেন স্থানীয়রা।