কঠিন ত্বকের নীচেই প্রবাহিত তরল গলিত লৌহ নদীর চোরা স্রোত! কতটা ‘নরম’ পৃথিবীর কেন্দ্র?

কঠিন ত্বকের নীচেই প্রবাহিত তরল গলিত লৌহ নদীর চোরা স্রোত! কতটা ‘নরম’ পৃথিবীর কেন্দ্র?

কলকাতা:  পাহাড়, পর্বত, নদী, মালভূমিতে ঘেরা আমাদের এই পৃথিবী৷ একদিকে রয়েছে সুউচ্চ হিমালয়, আল্পস, আন্দিজের মত পর্বতমালা, তিব্বত-পামীরের মতো মালভূমি।  অন্যদিকে, সাগর-মহাসাগর৷ পৃথিবী পৃষ্ঠের সর্বত্র সমান নয়৷  এমন অনেক জায়গা রয়েছে যা কঠিন পাথরে মোড়া৷ কিছু কিছু জায়গায় মাটি এতোটাই কঠিন যে, সেখানে ফসল ফলানোও দুষ্কর। কিন্তু সত্যিই কি এতটাই কঠিন আমাদের নীল গ্রহ? ভূবিজ্ঞানীদের গবেষণায় মিলল চাঞ্চল্যকর উত্তর। 

গবেষকরা বলছেন, পৃথিবী পৃষ্ঠ বা পৃথিবীর উপরিভাগ যতটা শক্ত, ভূগর্ভস্থ এলাকা মোটেও ততটা কঠিন নয়। বরং সখানে রয়েছে খানিকটা তরল ও কঠিনের সংমিশ্রণের তৈরি একটি থকথকে মণ্ড৷ যা ভূগর্ভের অভ্যন্তরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রবাহিত৷

পৃথিবী জুড়ে যে সব রহস্যের মায়াজাল রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল পৃথিবীর কেন্দ্র৷ পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই। পাশাপাশি ভূমিকম্প নিয়েও চলেছে গবেষণা। সম্প্রতি ভূকম্পন তরঙ্গের ক্ষীণ প্রতিধ্বনি বিশ্লেষণ করেন নতুন তথ্য খুঁজে পান ভূবিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্র থেকে কম্পনের প্রতিধ্বনি ভূস্তরের উপরিভাগে ফিরে আসার প্রমাণ মিলেছে। আর তাতেই কেন্দ্রস্থল নিয়ে এতদিন ধরে চলে আসা  ধারনা অনেকখানি বদলে গিয়েছে৷

ভূবিজ্ঞানীরা আমাদের সামনে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছে৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল প্রতি বছর ০.০৪ ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ভিতরের দিকটা তুলনামূলকভাবে কঠিন। তবে বাইরের অংশ থকথকে তরল প্রকৃতির। যা অত্যন্ত উত্তপ্ত৷ তবে ধীরে ধীরে সেই তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে৷ যার জেরে ওই তরল অংশও কঠিন রূপ ধারণ করছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের কলেবর।

এই প্রসঙ্গে উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ তথা অধ্যাপক কিথ কোপার বলেন, ‘‘ভূকেন্দ্রে কোর এলাকায় যে থকথকে মণ্ডের মতো পদার্থ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে তরলীভূত লোহা। পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের কারণে যে চৌম্বকীয় টান রয়েছে, তার জেরে ওই তরল লোহা ঘূর্ণায়মান অবস্থা তৈরি করতে পারে।’’ ভূগর্ভের অনেকটা গভীরে গেলে তরল লোহার স্তর মিলতে পারে বলেও ইঙ্গিত তাঁর৷

চলতি বছর ভূগর্ভের কেন্দ্রস্থল ও তার বাইরের অংশের মাঝে সুবিশাল এক পর্বতের সন্ধান মিলেছে। যার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অনায়াসেই মাউন্ট এভারেস্টকে টেক্কা দিতে পারে৷ কারণ এটি উচ্চতায় হিমালয়ের চেয়েও  চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি বলে দাবি গবেষকদের।

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল ভূগর্ভস্থ বিষয়ে নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেশ কিছু তথ্য হাতে পায়। তাঁরা ভূমিকম্প ও পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণের জেরে তৈরি হওয়া তরঙ্গের সিসমিক তথ্য সংগ্রহ করেন। ওই তথ্য বিশ্লেষণ করেই তাঁরা পৃথিবীর কেন্দ্র মণ্ডলের সুবিশাল পর্বতমালার অস্তিত্বের কথা জানতে পারেন৷ গবেষকদের অনুমান, তরল ও কঠিনের সংমিশ্রনে তৈরি থকথকে পদার্থগুলি জমাট বেঁধেই গড়ে উঠেছে ওই পাহাড়৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − six =