কলকাতা: নুন-চিনি ছাড়া আবার রান্না হয় নাকি? সে কথা ঠিকই৷ রান্নায় চিনি বাদ দিলেও নুন বাদ দেওয়া যায় না একেবারেই৷ তবে অনেকেই আছেন যাঁরা ভাতের সঙ্গে আলাদা করে নুন মেখে খেতে খুব পছন্দ করেন৷ যাকে বলে কাঁচা নুন৷ রান্না স্বাদ কম হলেই ভাতে নুন মিশিয়ে খাওয়াটা বাঙালির অভ্যেস৷ কিন্তু জানেন কি এই অভ্যেস আপনার অজান্তেই বিপদ ডেকে আনছে৷ কারণ, কাঁচা নুন খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অতিরিক্ত নুন খেলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? আসুন দেখা যাক—
অতিরিক্ত নুন খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা বহুলাংশে বেড়ে যায়। নুনে থাকে সোডিয়াম। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় সোডিয়াম থাকলে এবং তার চেয়ে কম মাত্রায় পটাশিয়াম শরীরে গেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তৈরি হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাঁর প্রতিদিনের খাওয়ারে সোডিয়ামের পরিমাণ যদি ৫ গ্রামে সীমাবদ্ধ রাখতে পারেন, তাহলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যা অনেকটাই লাঘব হতে পারে। রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে শুধু হার্ট নয়, চাপ বাড়ে কিডনি, ব্রেন এমনকী চোখের উপরেও।
অনেকেরই আবার ধারণা বিট নুন বা সৈন্ধব লবণ খেলে বুঝি কম ক্ষতি হয়। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। এই ধরনের নুনেও সোডিয়াম থাকে৷ তাই মাত্রাতিরিক্ত বিট নুন বা সৈন্ধব লবণ খেলেও একই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একই কথা খাটে পিঙ্ক সল্টের ক্ষেত্রেও। অনেকে আবার রান্নায় দেওয়ার আগে নুন ভেজে নেন৷ এতেও বিশেষ লাভ নেই। তেমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
চিকিৎসকরা বলছেন, ছোটদের নুন কম খাওয়ালে কিন্তু কোনও সমস্যা নেই৷ কারণ সব্জি, তরকারিতে যে পরিমাণ নুন থাকে, তাতেই ছোটদের শরীরে নুনের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। একই কথা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ তবে একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ যদি প্রতিদিন ৩ গ্রামের কম নুন খান, তাহলে তাঁর শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর থেকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সকলেরই পরিমিত নুন খাওয়া উচিত।
এবার আসা যাক চিনির কথা৷ চিনি শরীরর প্রভূত ক্ষতি করে৷ চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমালে একাধিক সমস্যার সমাধান মিলতে পারে৷
কমবে ওজন
অল্প পরিমাণ চিনির মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি। বিভিন্ন খাবারের মধ্যে দিয়ে সারাদিনে অনেকটাই চিনি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। চা-কফিতে তো বটেই৷ রান্নাতেও চিনি দেওয়াটা অনেকেরই অভ্যেস৷ তথ্য বলছে আমরা দিনে গড়ে প্রায় ২০-২২ চামচ চিনি খেয়েই ফেলি। ১ চা চামচ চিনিতে থাকে প্রায় ১৬ কিলো ক্যালোরি এনার্জি৷ অর্থাৎ একজন মানুষ সারাদিনে প্রায় ৩২০ কিলোক্যালোরি বা তারও বেশি এনার্জি গ্রহণ করেন। দেখা গিয়েছে, ডায়েট থেকে শুধু চিনি এবং চিনি মেশানো খাবার বাদ দিলে মাসে প্রায় ১ কেজি ওজন কমানো সম্ভব হয়েছে।
হার্টের অসুখ লাগাম
বেশি চিনি খেলে রক্তে ইনসুলিন বাড়ে। হার্ট রেট ও রক্তচাপ বৃদ্ধির আশঙ্কাও বাড়তে থাকে। খাদ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত এনার্জির ১৫ শতাংশ চিনি মেশানো খাদ্য থেকে এলে, করোনারি হার্ট ডিজিজের আশঙ্কা প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ে।
বয়সও দেখাবে কম
চিনির জন্য ত্বকের কোলাজেন ভাঙতে থাকে৷ ফলে ত্বকের টানটান ভাব হারাতে থাকে। চিনি বাদ দিলে কোলাজেনও অটুট থাকবে। বয়সও দেখাবে কম।
ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কমায়
চিনিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকায় শরীরের ফ্যাট বাড়ে। ফ্যাট বাড়লে ইনসুলিনের মাত্রাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বেশি ফ্যাটের জন্য ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও হলে টাইপ -২ ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে৷
স্মৃতিশক্তি
বেশিমাত্রায় সুগার খেলে ব্রেনের স্নায়ুকোষগুলি নষ্ট হতে শুরু করে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে স্মৃতিশক্তির উপরে।
দূরে থাকবে অনিদ্রা
বেশি রাতে চিনিমেশানো খাদ্যগ্রহণ করলে তা ঘুমের পথে বাধা সৃষ্টি করে৷ কারণ চিনির কাজ ক্লান্তি দূর করা। শরীরে একসঙ্গে অনেকখানি এনার্জির জোগান দেয় চিনি। ফলে রাতে চিনি মেশানো খাবার খেলে অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যরক্ষা
চিনিযুক্ত খাদ্যের সঙ্গে দাঁতের ক্ষয়ের একটা সম্পর্ক রয়েছে৷ কারণ মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়া চিনি খায়, বংশবৃদ্ধি করে এবং অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিড দাঁতের এনামেল নষ্ট করে তা দ্রুত ক্ষয়ের পথে নিয়ে হয়।
ফ্যাটি লিভারের আশঙ্কা কমায়
অতিরিক্ত চিনি খেলে আবার নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা তৈরি হতে পারে।