আগরতলা: সুপ্রিম কোর্ট ও ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ে যে ১০ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষক কাজ হারিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন স্বপন দেববর্মাা। এরপর বামফ্রন্ট আমলে অশিক্ষক পদ গঠন করা হয়েছিল, তখন ফের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন স্বপন বাবু। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই সেই স্বপ্নও পরিবর্তন হয়ে যায় তাঁর।
জিরানীয়া মহকুমার রাজচন্তাইয়ের বাসিন্দা স্বপন দেববর্মা। পূর্ব স্মৃতি মনে করতে গিয়ে নিজেকে সামলাতে পারেননি এই চাকরিচ্যুত শিক্ষক। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের বিকল্প চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথায় অনেকটাই আশা রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু চলতি বছর ৩১ মার্চের পর চাকরি চলে যায়। ঘরে মা-বাবা, স্ত্রী, দুই সন্তান রয়েছেন স্বপন বাবুর। অভাবের সংসারের ঘানি টানতে বর্তমানে মাংস কাটেন এই শিক্ষক।
পুরনো কথা স্মরণ করে স্বপন বাবু জানান, তাঁর বাবা নিজে একবেলা না খেয়ে তাঁকে পড়াশোনা করিয়েছিলেন। অনেক চড়াই উৎরাই পাড় করে স্বপন বাবু বড় হয়েছেন। উচ্চ শিক্ষা করাতে চেয়েছিলেন তাঁর বাবা, কিন্তু অভাবের সংসারের কথা ভেবেই স্বপন বাবু উচ্চ শিক্ষা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। একসময় দিনমজুর কিংবা জোগালির কাজও করেছেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালে স্নাতকহীন শিক্ষক পদে চাকরি পেয়েছিলেন স্বপন বাবু। চম্পকনগরের সাধুপাড়ার ত্রিপুরা লোকশিক্ষা হাইস্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। আলোর দিন আসতে শুরু করে তাঁর জীবনে। বেতন যা পেতেন তা দিয়ে বেশ ভালই চলত সংসার। বিয়ে করলেন একসময়। কিন্তু ঠিক এক দশক পর আবারও সেই দুর্দিন ফিরে আসে স্বপন বাবুর জীবনে। ৩১ মার্চ দিনটা তাঁর কাছে অভিশপ্ত।
চাকরি হারিয়ে ফেলে দিশাহারা হয়ে যান স্বপন বাবু। তাঁর বাবারও বয়স হয়েছে, খাটতে পারেন না আর। তাই কোনও উপায় না পেয়ে নতুন পেশা হিসাবে মাংস কাটতে শুরু করেন। যদিও এই পেশা করে লজ্জা পান না তিনি, শুধুমাত্র আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে। তাঁর জানান, যে হাতে ডাস্টার চক ধরতেন, সেই হাত দিয়ে এখন মাংস কাটতে হচ্ছে তাঁকে। এখন চরা রোদই হোক কিংবা মেঘভাঙা বৃষ্টি, পলিথিন টাঙিয়ে সারাদিন বসে থাকেন মাংস নিয়ে। তাঁর কথায়, “সামান্য রোজগারে খাওন তো জুঠে, ঘরে বইয়া থাওলে ইডাও জুটত না!”
স্বপন বাবুর মেয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। অভাবের কারণে মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার জোগার। তাঁর জানেন, বাঁচতে গেলে লড়াই করতে হয়। ছোটবেলা থেকে সেই অভিজ্ঞতাই পেয়েছেন তিনি। যদিও তাঁর এই অবস্থার জন্য বর্তমান রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছেন স্বপন বাবু।