বামেদের ভোট প্রার্থনা দিলীপের, বর্ধমান-দুর্গাপুরের পিচ খুব কঠিন নাকি!

বামেদের ভোট প্রার্থনা দিলীপের, বর্ধমান-দুর্গাপুরের পিচ খুব কঠিন নাকি!

নিজস্ব প্রতিনিধি: সিপিএম তথা বামেদের ভোট প্রার্থনা করলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। দিলীপের স্পষ্ট আবেদন, এই নির্বাচনে তৃণমূলকে পরাস্ত করতে হলে বিজেপিকে, অর্থাৎ তাঁকে ভোট দিতে হবে বামেদের। মঙ্গলবার ভোট প্রচারে গিয়ে দিলীপকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলতে শোনা গিয়েছে, “আপনাদের অপকর্মের জন্য আজ তৃণমূল এখানে রাজত্ব করছে। আপনাদের দায়িত্ব আছে এদের তাড়াবার। তাই আমি বলছি রং পড়ে দেখব, আগে এই ডাকাতগুলোকে সরাতে হবে। আসুন মোদিজির হাত শক্ত করুন। আগে এদের সরিয়ে দেব, তারপর ঝান্ডার রং দেখব। বিধানসভা, পুরসভা, পঞ্চায়েত ভোটে আপনি আপনার ঝান্ডা নিয়ে নির্বাচন করুন। তার আগে বাংলাকে ডাকাত-চোর মুক্ত করুন। গতবারের ভোটে ২২ শতাংশ বাম ভোটার আমাদের দিকে এসেছিলেন। তাই আমরা বিধায়ক, সাংসদ জিতেছি।”

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বর্ধমান-দুর্গাপুরের পিচ খুবই কঠিন নাকি যে দিলীপকে এমন আবেদন করতে হচ্ছে? তবে কী একসময়ের লাল দুর্গ বলে পরিচিত বর্ধমানে সিপিএম এখনও মোটামুটি বলার মতো  শক্তি ধরে রেখেছে? ঘটনা হল গত লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরী ১ লক্ষ ৬১ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে কংগ্রেস প্রার্থী রণজিৎ মুখোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৩৮ হাজার ভোট। সেই নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী এসএস আলুওয়ালিয়া মাত্র ২৪৩৯ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতাকে হারিয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই মার্জিন অত্যন্ত কম বললেও যেন যথেষ্ট হয় না। রাজনৈতিক মহলের মতে এবারেও যদি কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী তাঁদের ভোট ধরে রাখতে পারেন তাহলে বিজেপির পক্ষে লড়াইটা বেশ কঠিন হয়ে যাবে। আর সিপিএমের ভোট যদি আরও বাড়ে তাহলে তিনি কাদের ভোট কাটবেন সেটা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার বিশ্বকাপ জয়ী কীর্তি আজাদ। তাঁর সঙ্গেই দিলীপের মূল লড়াই হচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। যদিও সেখানে প্রবল ভাবে ময়দানে রয়েছেন সিপিএম প্রার্থী ড. সুকৃত ঘোষাল। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ দিলীপ এই সমীকরণ ভালভাবেই বোঝেন। তিনি জানেন সিপিএমের ভোটের উল্লেখযোগ্য অংশ তাঁর দিকে আসলে জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে।

বঙ্গ রাজনীতিতে বিগত কয়েক বছর ধরে একটা চর্চা চলছে যে, সিপিএম ও কংগ্রেস এখানে প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেই ধারণা যে পুরোপুরি ঠিক নয় তা বিভিন্ন লোকসভা ভিত্তিক ভোটের পরিসংখ্যানই স্পষ্ট করে দিচ্ছে। একটা সময়ে বর্ধমান ও দুর্গাপুর সিপিএমের লালদুর্গ বলে পরিচিত ছিল। বছরের পর বছর ধরে লোকসভা নির্বাচনে সেখানে কোনও বিরোধী দাঁত ফোটাতে পারেনি। তবে রাজ্যে ২০১১ সালে পরিবর্তনের পর ছবিটা বদলাতে শুরু করে।  ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে সিপিএমকে হারিয়ে দেয় তৃণমূল।‌ যদিও গতবার কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয়ে যায় তৃণমূলের। সেখানে বাজিমাত করে বিজেপি। এই আবহের মধ্যে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর সেখানকার ভোট সমীকরণ বুঝেই বামেদের কাছে টানার বার্তা দিয়েছেন দিলীপ। দিলীপের এই আবেদন ভোটবাক্সে কতটা প্রতিফলিত হয় এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *