বারাসত: আজ বনগাঁয় চায় পে চর্চায় অংশ নেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ সেখানে বিধায়কের বাড়ির পুকুরে মাছ ধরতে যান তিনি৷ প্রথমে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও, পরে ছিপ ফেলে মাছ ধরতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি৷ ভেঙে যায় দিলীপের ছিপ৷ এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাবার পর ইতিমধ্যে হাস্যরসে এই ঘটনার চর্চা করা হচ্ছে। মাছ ধরতে গিয়ে যে দিলীপ ঘোষ ছিপ ভেঙে ফেলেন, সেই দিলীপ ঘোষ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের ‘ছিপ’ শক্ত ভাবে ধরতে পারবেন তো?
বাংলা দখলের লড়াইয়ের প্রস্তুতি অনেক সময় আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি ব্রিগেড। বাংলায় সাংগঠনিক শক্তি প্রবল করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে একাধিকবার। কেন্দ্রের তরফে বাংলায় একদিকে যেমন এসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অন্যদিকে রাজ্যসভার করেছেন সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলার একটি দল পাঠিয়েছে পর্যবেক্ষণের জন্য। আগামী নির্বাচনের কয়েক মাস মাত্র বাকি, তার আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সারতে ব্যস্ত বিজেপি। কিন্তু এখন চর্চা শুরু হয়েছে, দিলীপ ঘোষের এই ছিপ ভাঙার ঘটনা যেন রাজনৈতিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা না পায়। মাছ ধরতে গিয়ে ছিপ ভেঙে ফেলা পর্যন্ত ঠিক আছে, ২১-এর নির্বাচনের ছিপ যেন তিনি শক্ত করে ধরতে পারেন, এমনটাই হয়তো আশা করবে গেরুয়া শিবির। কারণ বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ দিন দিন যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ‘ছিপ’ ধরা যে খুব একটা সহজ কাজ হবে না তা বলাই বাহুল্য। আরে সে ক্ষেত্রে যদি মাছ ধরার ছিপের মতো সেই ছিপও দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বাধীন বঙ্গ বিজেপি ব্রিগেডে ভেঙে ফেলে, তাহলে কিন্তু সব আশায় জল।
লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় অপ্রত্যাশিত ফল করেছিল বিজেপি। সেই ফলের কথা মাথায় রেখেই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের। এক কথায় বলা যায়, লোকসভা নির্বাচনের পরেই বাংলা জয়ের স্বপ্ন আরো বেশি করে দেখতে শুরু করেছে বিজেপি। এক্ষেত্রে কোনো রকম ঝুঁকি বা ‘ফাউল’ করতে রাজি নয় তারা। যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভাবনা চিন্তার দরকার রয়েছে। আরে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে দিলীপ ঘোষ যে খুব একটা ভেবেচিন্তে মাঝে মাঝে কথা বলেন না সে কারও কারও অজানা নয়। সদ্য মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শুভেন্দু অধিকারী। এর আগে মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মতই শুভেন্দু অধিকারী কেউ বিজেপিতে আগমনের বার্তা দিয়েছেন দিলীপ। শুভেন্দু অধিকারীর তরফে এখনও স্পষ্ট করা হয়নি যে তিনি বিজেপিতে যাবেন, নাকি অন্য কোন দলে যাবেন, নাকি রাজনৈতিক অবসর নেবেন। তার আগেই দিলীপ ঘোষের এমন একটি মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গ রাজনীতির পারদ চড়িয়েছে। তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে দলে নেওয়া একদিকে যেমন বিজেপির ভালো করতে পারে, অন্যদিকে গেরুয়া শিবিরের অসন্তোষ বাড়তে পারে। অতীতে, শোভন এবং মুকুল দুজনকে নিয়ে এই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে বিজেপি। অতএব এখন বঙ্গ গেরুয়া শিবির যে হঠকারী সিদ্ধান্ত বা মন্তব্যের সমর্থনে নয়, তা বোঝা যায়। এক্ষেত্রে একটা বিষয়েই নজর রাখতে হয়, উচ্ছ্বসিত হয়ে গিয়ে তৃণমূলী সদস্যদের দলে নেওয়ার চেষ্টায় নিজেদের নির্বাচনী ‘ছিপ’ আদৌ কতটা শক্ত করে ধরে রাখতে পারে বিজেপি। আর যদি দিলীপ ঘোষ বা তাঁর দলের কেউ আজকের মত ঘটনা ২১-র আবহে ঘটিয়ে ফেলেন, তাহলে কিন্তু…