কলকাতা: ফি বছর বর্ষার মরশুমে বাড়ে ডেঙ্গির উপদ্রব৷ এবারও ব্যতিক্রম নয়৷ রাজ্যে ক্রমেই উর্ধ্বমুখী ডেঙ্গির গ্রাফ৷ জেলায় জেলায় বাড়ছে ডেঙ্গির দাপট৷ এমতাবস্থায় আজ সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে বৈঠক হয়। ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি বৈঠকের পর নির্দেশিকা জারি করা হয় স্বাস্থ্য দফতরের তরফে। আগামীকাল কোর কমিটির বৈঠক হবে নবান্নে। রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে, শনিবার থেকেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে শুরু হয়েছে পরিদর্শনের কাজ৷ ইতিমধ্যেই ৬টি জেলা পরিদর্শন করে রিপোর্ট তৈরি করেছে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ টিম। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই আজ পরিকাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন আধিকারিকরা।
জানা যাচ্ছে, হাওড়ায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ কিন্তু সেই তুলনায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম। অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা৷ উত্তর ২৪ পরগনায় ক্রমশ এবছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা গতবারের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৭০০-এর বেশি।
চলতি বছর একেই লেট এন্ট্রি নিয়েছে বর্ষা৷ তার উপর দুর্বল ব্যাটিং৷ বৃষ্টির ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু, একটু জল জমলেই লাফিয়ে বাড়ছে মশার বংশ। সেই সঙ্গে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ। রাজ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি পরিস্থিতি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শহরে ১২ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৭ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর। এই পরিস্থিতিতে বুধবার সব জেলার CMOH-দের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।
স্বাস্থ্য ভবনের বৈঠকে বলা হয়েছে –
• প্রতিটি হাসপাতালে পুরোদমে ফিভার ক্লিনিক চালু করতে হবে। সহজে তথ্য পেতে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের রেজিস্টার তৈরি করতে হবে।
• হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গি রোগীদের জন্য ২৪ ঘণ্টা ল্যাব চালু রাখতে হবে। যেদিন রক্ত সংগ্রহ করা হবে, সেদিনই ডেঙ্গি পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে হবে৷
• ডেঙ্গি আক্রান্তদের চিকিৎসার বাইরের বিষয়গুলি দেখাশোনার জন্য একজন আধিকারিক নিয়োগ করতে হবে।
• জরুরি সময়ে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে খামতি দেখা গিয়েছে। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু, দুটি ক্ষেত্রেই বিলম্বিত হচ্ছে। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
• প্লেটলেটের যোগান সহ ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিষেবা যাতে যথাযথ থাকে, সেই বিষয়টি দায়িত্ব নিয়ে দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে।
• ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর অবস্থার উন্নতি বা অবনতি সম্পর্কিত তথ্যের ওপর সর্বদা নজর রাখতে হবে সুপারকে।
ডেঙ্গি রুখতে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে-
জমা জলে ডেঙ্গির মশার আঁতুরঘর। তাই কোথাও জল জমতে দেওয়া যাবে না। ছাদ হোক বা করে বাড়ির আনাচ কানাচ, নর্দমা, বাড়ির চারিধার পরিষ্কার রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাতে মশারি টানানোর কথা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতীতে মশারি সহ পথে নেমে সচেতনা অভিযান চালিয়েছে পুরসভাগুলি।
পাশাপাশি শরীরের দিকে নজর রাখতে হবে৷ কী কী উপস্বর্গ দেখা দিয়েছে ? ডেঙ্গির উপস্বর্গের কোনও বহিঃপ্রকাশ দেখলেই দ্রুত নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গি টেস্ট করানোর কথাও বলা হয়েছে। কারণ, রোগ যতদ্রুত ধরা পড়বে, আপনার সুস্থ হয়ে ওঠার প্রবণতাও তত বাড়বে।