হাওড়া: করোনা মহামারী অনেক কিছুই দেখিয়েছে। হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করাতে যেমন কালঘাম ছুটেছে পরিবারের, তেমনই দেখা গিয়েছে করোনায় মৃত ব্যক্তির সৎকারের ব্যবস্থা করা নিয়ে হাজারও অসুবিধার ঘটনা৷ কিন্তু হাওড়া হাসপাতালে এবার যে দৃশ্য দেখা গেল, তা সব কিছুকে হার মানিয়েছে৷ ওয়ার্ডমাস্টারের ঘরের সামনে এক বৃদ্ধ ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে রইল, তার পায়ের ক্ষত ঠুকরে খেল কাক৷ এই অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল হাওড়া হাসপাতালে আসা অন্য রোগীদের পরিজনেরা৷
হাসপাতালে ওই সময়ে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগের তীর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দিকে। তাদের অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওই ব্যক্তি ওয়ার্ডমাস্টারের ঘরের সামনে পড়ে থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেননি। পুলিশ অনুমান করেছে ওই ব্যক্তি ভবঘুরে। কিন্তু অনেকেই বলেছেন, আগেও ওই ব্যক্তিকে হাসপাতাল চত্বরে দেখা গিয়েছিল। সোমবার তিনি হাসপাতালের পাশে ঋষি বঙ্কিম সরণিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতাল তরফে জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তি মোটেই দীর্ঘক্ষণ ওয়ার্ডমাস্টারের ঘরের সামনে পড়ে ছিল না। প্রথমে তাঁকে দেখে বোঝাই যায়নি তিনি অসুস্থ। পরে খবর পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছিল কর্তৃপক্ষ, কিন্তু ততক্ষণে তিনি মারা গিয়েছিলেন৷ হাসপাতালে ভর্তি অন্য এক রোগীর পরিজন সোনালি নস্কর বলেছেন, “অনেকক্ষণ ধরেই ওই বৃদ্ধ পড়ে ছিলেন। মাঝে একবার বোতল খুলে জলও খেয়েছিলেন। ওঁর পায়ের ক্ষততে কাক ঠোকরাচ্ছিল। করোনা রোগী ভেবে কেউই সাহায্য করতে এগোয়নি। পরে আমরা ওয়ার্ডমাস্টারকে খবর দিতে তিনি দ্রুত ওঁকে জরুরি বিভাগে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।”
হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ওই বৃদ্ধ যেখানে পড়ে ছিলেন বলে শোনা গেছে, সেখান দিয়ে তিনি দুপুর দেড়টা নাগাদ গিয়েছেন। কিন্তু তখন তিনি কাউকেই সেখানে পড়ে থাকতে দেখেননি। তাঁর কথায়, এমন অনেকেই খাবারের সন্ধানে হাসপাতালে প্রবেশ করে। বৃদ্ধ যে অসুস্থ তা ওঁকে দেখেও বোঝা যায়নি, কিন্তু যখনই জানা গেছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সুপার। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।