এক মহান ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন দাদা, প্রণব-প্রয়াণে স্তব্ধ ‘ছোট ভাই’

বিপ্র বাবুর কথায়, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিল্লির বাড়িতে প্রায়ই তাঁর যাতায়াত ছিল। সে সময় ইন্দিরা গান্ধী বসেছেন মসনদে। রাত্রীবেলা প্রায় সাড়ে ১০টার পর বাড়ি ফিরে প্রণব বাবু ডাক দিলেন বিপ্রদাস'কে। যদিও প্রণব বাবু তাঁকে 'বিপ্রতীপ' বলেই সম্মোধন করতেন। যাইহোক, ডেকে বললেন 'বিপ্রতীপ তুমি আজ এ ঘরে শুয়ো না বাইরের ঘরে শোও।'

 

সিদ্ধার্থ বোস: আলাপের শুরুটা হয়েছিল ছাত্র রাজনীতি দিয়ে। তারপর পরিবারের একজন থেকে 'ছোট ভাই' হিসাবে পরিণত হন। ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন। গভীর শোকে রয়েছেন তাঁর 'ছোট ভাই' বিপ্রদাস বন্ধ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে হাওড়া শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক তিনি৷ আগাগোড়া জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিপ্রবাবু৷

রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের খুব কাছের মানুষ ছিলেন বিপ্রদাস বন্ধ্যোপাধ্যায়। প্রয়াত 'দাদা'র শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকতে না পেরে মূহ্যমান হয়েছেন তিনি। একাধিক স্মৃতি এখন তাঁর মনে ভেসে উঠছে। প্রণব-সম্পর্কে বিপ্রবাবুর বলেন, ‘‘একজন মহান ব্যক্তির সঙ্গে দাদা আমাকে আলাপ করিয়েছিলেন। আমি হতবাক হয়েছিলাম। কাউকে বলতে পারিনি। আজ বলতে ইচ্ছা করছে।’’ কে সেই মহান ব্যাক্তি?

বিপ্রবাবুর কথায়, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিল্লির বাড়িতে প্রায় তাঁর যাতায়াত ছিল। সে সময় ইন্দিরা গান্ধী বসেছেন মসনদে। রাতে প্রায় সাড়ে ১০টার পর বাড়ি ফিরে প্রণববাবু৷ ডাক দিলেন বিপ্রদাস'কে। যদিও প্রণববাবু তাঁকে 'বিপ্রতীপ' বলেই সম্মোধন করতেন। ডেকে বললেন 'বিপ্রতীপ তুমি আজ এ ঘরে শুয়ো না বাইরের ঘরে শোও।' বিপ্রবাবু কারণ জিজ্ঞেস করায় প্রণব বাবু তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘ভোর বেলায় একজন আসবেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। তুমি সকালে এলে দরজা খুলে দিও আর আমাকে ডেকে দিও।' কথামতোই বিপ্রবাবু বাইরের ঘরে শুয়ে ছিলেন সেদিন। সত্যিই ভোর রাতে এলেন একজন৷ একগাল দাড়ি, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি। বিপ্র বাবুকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন প্রণববাবু বাড়ি আছেন কিনা। বিপ্রবাবু কথামতোই তাঁকে ঘরের ভিতর বসতে দিয়ে প্রণববাবুকে গিয়ে খবর দিলেন। প্রণব বাবু ওই ব্যক্তিকে নিজের ঘরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিপ্রবাবুকে। এরপর যতক্ষণ ওঁরা কথা বলছিলেন, বিপ্র বাবু ততক্ষণ বাইরেই ছিলেন। তারপর একসময় প্রণববাবু তাঁকে ডেকে বলেন, 'এঁকে চিনিস?' বিপ্রবাবু তাঁকে চিনতেন না। কিন্তু বিপ্রবাবুর কথায়, এরপর তিনি যা শুনেছিলেন, তাতে তিনি চমকে ওঠেন৷  প্রণববাবু জানান, এই ব্যক্তি হচ্ছেন বাংলাদেশের বাঘা সিদ্দিকি।

বিপ্রদাস বন্ধ্যোপাধ্যায় ও প্রণব বাবু এক ফ্রেমে

বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সেই সময় হত্যা করা হয়েছিল। রহমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন বাঘা সিদ্দিকি। বাংলাদেশের কাছে তিনি সেই সময়ে 'ওয়ান্টেড'। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাঘা সিদ্দিকি সব সময় সাহায্য পেয়েছেন। সেই সূত্রে প্রণব বাবুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বাঘা সিদ্দিকি। এমনটাই জানান, প্রণবের ছোট ভাই বিপ্রদাস বন্ধ্যোপাধ্যায়। এরপর তিনি প্রায় কেঁদে ফেলে জানান, 'আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, প্রণব দা আমাকে ওঁর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন।'

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × two =