ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভণ্ড নিউজিল্যান্ড, আশ্রয়হীন কয়েক হাজার মানুষ, অন্ধকারে ডুবেছে শহর

ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভণ্ড নিউজিল্যান্ড, আশ্রয়হীন কয়েক হাজার মানুষ, অন্ধকারে ডুবেছে শহর

ওয়েলিংটন: একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন আমাদের এই পৃথিবী৷ ভূমিকম্পে ছারখাড় তুরস্ক৷ সেই পরিস্থিতি সামলে ওঠার আগে নিউজিল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের উপর আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় ‘গ্যাব্রিয়েল’৷ তৈরি হয়েছে ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতি৷ জলবন্দি কয়েক হাজার মানুষ৷ প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু বাড়ির মাথায়৷ বিভিন্ন জায়গায় ধস নেমেছে। অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার বাড়ি৷ এই পরিস্থিতিতে অকল্যান্ড সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে নিউজিল্যান্ড সরকার৷ এ নিয়ে তৃতীয়বার জরুরি অবস্থা জারি হল সে দেশে৷ এর আগে ২০১১ সালে ভূমিকম্প এবং ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল নিউজিল্যান্ড।

আরও পড়ুন- দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ‘মারবার্গ’ ভাইরাসের সংক্রমণ, সতর্কবার্তা দিল WHO

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত ৫০৯টি বিমান বাতিল করা হয়েছে৷ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘নিউজিল্যান্ডবাসীর জন্য বিশেষ করে আপার নর্থ আইল্যান্ডের বাসিন্দাদের জন্য আজকের রাতটি সত্যই দীর্ঘ। অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে, অনেক বাড়িঘর বিদ্যুৎহীন, দেশ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

নিউজিল্যান্ডের জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী কিয়েরান ম্যাকনাল্টি বলেন, প্রচন্ড হাওড়া ও ভারী বর্ষণের কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ঝড়ের ধাক্কায় বহু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷  বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে।  

কিছুদিন আগেই আকস্মিক বন্যার কারণে নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম শহর অকল্যান্ডে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেখানে এখনও পুনরুদ্ধার কাজ চলছে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিনস শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘একটা খারাপ আবহাওয়ার পর আরেকটা খারাপ আবহাওয়া দেশের মানুষকে বিপদের মধ্যে ফেলেছে।’

নর্থ আইল্যান্ডের পূর্ব উপকূলের কাছে অকল্যান্ড থেকে ১০০ কিলোমিটার পূর্বে ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েল অবস্থান করছে।  ঝড়টি পূর্ব-দক্ষিণ পূর্ব দিকে সরে গিয়ে উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে৷ আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমাগত সরতে থাকায় আপার সাউথ আইল্যান্ডেও আবহাওয়া খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ 

সমুদ্রতী উপকূলবর্তী এলাকা ইতিমধ্যেই ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে। নদীগুলোর জল উপচে পড়ায় তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হচ্ছে। সড়ক পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিপর্যস্ত মোবাইল পরিষেবা। কিছু কিছু শহর একেবারেই যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।  

হিপকিন্স বলেন, কতসংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন বা আহত হয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুর খবর জানা যায়নি।
ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পার্লামেন্ট অধিবেশন বসতে চলেছে। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি থাকবে।