বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে না সিপিএম! পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসও কি একই পথে হাঁটবে?

বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে না সিপিএম! পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসও কি একই পথে হাঁটবে?

cpim

কলকাতা: সবারই লক্ষ্য কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে হটানো। সেই কারণেই গঠিত হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। কিন্তু সেই জোটে তৃণমূলের ঝকঝকে উপস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বাম-কংগ্রেসের নীচুতলার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সিপিএম বিরোধী জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠকে সামিল না হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। বুঝিয়ে দিয়েছে তারা পশ্চিমবঙ্গে কোনও ভাবেই তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে না। তাই লোকসভা নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে তখন কি পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের মধ্যেও একই ঘটনা ঘটতে দেখা যাবে? রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব একই ভাবে কী তৃণমূলের সঙ্গে জোট না করে শুধু বামেদের সঙ্গী করে ৪২টি আসনে প্রার্থী দেবেন? অর্থাৎ দেশ জুড়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সূত্র মেনে যেভাবে আসন সমঝোতা হবে তা কী পুরোপুরি ধাক্কা খাবে পশ্চিমবঙ্গে? বাংলায় ভেঙে যাবে বিরোধী জোট? এই চর্চা বেশ ক’দিন ধরেই শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।‌

পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেশ কিছু জেলায় বাম-কংগ্রেসের ভোট আগের চেয়ে সামান্য হলেও বেড়েছে। পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন দুটি দলের নীচুতলার কর্মী-সমর্থকরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে জেলায় জেলায়, তাতে বাম-কংগ্রেসের বহু কর্মী সমর্থক প্রাণ হারিয়েছেন। যে সমস্ত ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এরপরই দেখা যায় সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতা ডি রাজা ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠকে যোগ দেওয়া তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলিঙ্গন করছেন।

তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। যেভাবে তৃণমূলের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছে সিপিএম তথা বাম শীর্ষ নেতৃত্বকে, তাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছেন রাজ্যের সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। এভাবে চললে বাম-কংগ্রেসের সামান্য যেটুকু ভোট অবশিষ্ট রয়েছে সেটাও বিজেপির দিকে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করতে থাকেন তাঁরা। সিপিএমের সেই আওয়াজ পৌঁছে যায় পলিটব্যুরোতে।

এরপরই দল সিদ্ধান্ত নেয় ‘ইন্ডিয়া’ জোটে থাকলেও সমন্বয় কমিটির বৈঠকে থাকবে না সিপিএম। এতে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা করা গেল বলে মনে করছে আলিমুদ্দিন। সেই সঙ্গে রাজ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বলছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস জোটে সম্ভবত যাবে না। সেক্ষেত্রে হাইকমান্ডের নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্ব মানবেন না বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তখন রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি ও তৃণমূলের প্রার্থী যেমন থাকবে, তেমনই সেখানে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বাম-কংগ্রেসের জোট প্রার্থী ৪২টি কেন্দ্রে লড়বেন, এই ছবি ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

বলাবাহুল্য ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে কিছুটা সুবিধা পাবে বিজেপি। একের বিরুদ্ধে এক হলে যে অসুবিধায় পড়তে হতো তাদের, সেক্ষেত্রে সেটা হবে না। বাম-কংগ্রেস জোট সংখ্যালঘু ভোটের কিছুটা কাটলেও পরোক্ষে সুবিধা হবে বিজেপির। সব মিলিয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *