মহাকাশে ‘মদের ভান্ডার’! ১০০ কোটি বছরেও শেষ হবে না যা, কেমন খেতে এই ‘মহাজাগতিক সুরা’?

মহাকাশে ‘মদের ভান্ডার’! ১০০ কোটি বছরেও শেষ হবে না যা, কেমন খেতে এই ‘মহাজাগতিক সুরা’?

নয়াদিল্লি: ‘বিপিন বাবুর কারণ সুধা, মেটায় জ্বালা, মেটায় ক্ষুধা..’৷ সত্যি এই কারণ সুধায় ডুব দিয়ে না জানি কত দুঃখের সাগর পাড় করেছেন সুরা প্রেমীরা৷ এই পৃথিবীতে মদ্যপ্রেমীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়৷ বিভিন্ন মানুষের আবার বিভিন্ন ধরনের মদ পছন্দ। কারও পছন্দ হুইস্কি, তো কারও আবার বিয়ার কিংবা রাম। অনেক আবার বিদেশি দামি ব্র্যান্ডের মদে আসক্ত। কেউ আবার নেহাতই দেশি মদে মন ভোলান৷ কিন্তু জানেন কি, শুধু এই পৃথিবীতে নয়, মহাকাশেও লুকিয়ে রয়েছে মদের ভান্ডার। সেখানে পেঁজা মেঘের মতো ভেসে বেড়ায় সুরা! তবে এই সুরা মর্তের মদ্যপ্রেমীদের নাগালের বাইরে৷ মহাকাশে ভাসমান সেই মদের মেঘের দিকে চাইলেও হাত বাড়াতে পারবে না মানুষ। এ পৃথিবীতে হবে না মেঘ ভাঙা সুরাবৃষ্টিও!

কারণ, বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পৃথিবী থেকে এই মদের দূরত্ব ১০ হাজার আলোকবর্ষ। আজকের প্রযুক্তিতে সেখানে পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব। সেখানের এক নক্ষত্রমণ্ডলেই রয়েছে মদের অফুরন্ত ভান্ডার৷ তবে দুঃখের বিষয় হল, ভাসমান এই মদের মেঘরাশি রয়েছে পৃথিবী থেকে ৯৩ লক্ষ হাজার কোটি কিলোমিটার দূরে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই মেঘের কোথাও কোথাও মিলতে পারে একাধিক যৌগের ‘ককটেল’ও৷  সেই  ককটেলের মধ্যে রয়েছে কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড এবং অ্যামোনিয়ার মতো ক্ষতিকারক যৌগ৷ 

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ১৯৯৫ সালে আকুইলা নক্ষত্রমণ্ডলের কাছে এই মদের মেঘের সন্ধান মেলে৷ যা কিনা আমাদের সৌরজগতের ব্যাসের চেয়ে হাজার গুণ বড়। এই মেঘের মধ্যে এত বেশি পরিমাণ ইথাইল অ্যালকোহল রয়েছে, যা কয়েক লক্ষ কোটি বিয়ারের জোগান দিতে পারে। ১০০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ প্রত্যেক দিন যদি তিন লক্ষ বোতল করে সেই বিয়ার পান করেন, তবেই হয়তো শেষ হবে মহাজাগতিক এই মদের ভান্ডার৷ অর্থাৎ ১০০ কোটি বছরেও ফুরাবে না এই সুরা।

বিজ্ঞানীরা আরও একটি রহস্যের সন্ধান দিয়েছেন৷ তাঁরা জানিয়েছেন,  ওই নক্ষত্রমণ্ডলে আরও একটি মেঘমণ্ডল রয়েছে। এই দ্বিতীয় ‘খনি’তেও রয়েছে কোটি কোটি লিটার মহাজাগতিক মদ। তবে সেই মদ পানের অযোগ্য। কারণ সেই মেঘ মণ্ডলের অধিকাংশটাই বিষাক্ত মিথানল দিয়ে তৈরি৷ তবে এর ব্যাপ্তি বিশাল৷ মিথানলের এই মেঘ ৪৬ হাজার কোটি কিমি চওড়া। বিজ্ঞানীরা এই মেঘমণ্ডলের নাম দিয়েছেন স্যাজিটেরিয়াস বি২।

ন্যাশনাল রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরির অন্যতম শীর্ষ কর্তা ব্যারি টার্নারের মতে, এই মেঘের সাহায্যে আরও ভাল ভাবে বোঝা যেতে পারে যে, কী ভাবে প্রাণের উদ্ভব হয়েছিল। মহাকাশে গচ্ছিত এই মদের স্বাদ বা গন্ধ কেমন, সে সম্পর্কেও সম্ভাব্য উত্তর রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। এই মদের মেঘে যে ইথাইল ফর্মেট রয়েছে, তা একটি এস্টার। এই এস্টারের গন্ধ ব়্যাস্পবেরি ফলের মতো। আবার মনে করছেন, এর গন্ধ খানিকটা রাম-এর মতো। বিজ্ঞানীদের অনুমান, স্যাজিটেরিয়াস বি২ মেঘমণ্ডলের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি থেকে -২৩২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। তাপমাত্রা এবং চাপ কম হওয়ার ফলে এই মেঘে রসায়নিক বিক্রিয়াও অত্যন্ত ধীর গতিতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *